রাজশাহীতে উপসর্গে মৃত ১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত

প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২০; সময়: ২:৫৮ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে উপসর্গে মৃত ১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গত তিনি মাসে রাজশাহীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৭০ জন মারা গেছেন যাদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে পরবর্তিতে পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরো ১৩ জন। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা নেই কারও মধ্যে। চিকিৎসকরা বলছেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটেছে রাজশাহীতে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নির্ধারিত করোনা ভাইরাস ২৯, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড, খ্রিস্টান মিশন হাসপাতাল ও রামেক হাসপাতালের আইসিইউ এর হিসেবমতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনের দেহে মৃত্যুর পরে পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা সিভিল সার্জন প্রতিদিন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হিসাব দিলেও উপসর্গে মারা যাওয়া রোগীর কোনো হিসাব দেয় না। এর ফলে উপসর্গে মারা যাওয়া রোগীর হিসাব অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-শ্বষসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই বিভাগের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনাভাইরাস ওয়ার্ডের রোগী।

এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের তথ্যমতে, গতকাল ৮ জুলাই এ পর্যন্ত বিভাগের আট জেলার মধ্যে ছয় জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা ১০৩ জন। এর মধ্যে রাজশাহীতে মোট ১২ জন করোনায় মারা গেছে। জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১ হাজার ৩৩৮ জন।

রাজশাহীর প্রথম ল্যাবটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগে বসানো হয়েছে। গত ১ এপ্রিল থেকে সেটি চলছে। এই মেশিনটির প্রতিদিন ৯৪টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। গত ১২ এপ্রিল ৯০টি নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আরেকটি ল্যাব রামেক হাসপাতালের পরীক্ষাগার প্রস্তুত করা হয় গত (৫ মে)। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে দুই বছর আগে কেনা পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিনটিই এই ল্যাবে কাজে লাগানো হচ্ছে।

রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য জানান, রাজশাহীতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটেছে। কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। যত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তত যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাও।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মাহাবুবুর রহমান বাদশা জানান, করোনার বিষয়টি আগে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও এখন রূপ বদলে যাওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। এখন রূপ দিনে দিনে বদলে গেছে! আর করোনা যত বেশি জটিল হচ্ছে মানুষ ততবেশি অসচেতন থাকছে। এতে দিনে দিনে সচেতনতা কমছে তাই আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুও বাড়ছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালের চিৎসকদের আলাদা পরিবেশে থাকা দরকার সেটা নেই! তাই স্বাস্থ্যকর্মীরাও বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে রেড, ইয়ালো গ্রীল কোন সিগন্যালের পরিবেশ নেই। তা করলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো হবে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী জানান, আমরা প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব দিইনি। তাই এখন ফলাফল পাচ্ছি। এখন ভাইরাস অনেকটা ছড়িয়ে গেছে আর দিনে দিনে এর রূপ বদল হচ্ছে। চিকিৎসকরা সেবায় কর্মরত সকলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন জনসাধারণকেও আরো বেশি সচেতন হতে হবে।

এদিকে করোনায় রামেক হাসপাতালের আওতাধীন ২৯, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড, খ্রিস্টান মিশন হাসপাতাল, রামেক আইসিইউ মোট চারটি স্থানে চলছে করোনার সেবা। এখানে রোস্টার ও হোম কোয়ারেন্টাইন করে মোট ২৫০ জন চিকিৎসক ইর্ন্টানের নেতৃত্বে চিকিৎসা চলছে।

কয়েক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, ‘দিনে কয়েকবার শুধু নার্স এখানে কিছু কাজ করে আর চিকিৎসক দূর থেকে একবার কথা বলে চলে যায়। চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। তাঁরা সব সময় তাঁদের নির্ধারিত কক্ষে থাকেন।’

এ সকল বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, করোনাভাইরাস ইউনিটে যাঁরা ভর্তি হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের অনেকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, কিডনি, লিভারজনিত নানা রোগে ভুগছেন। কিছু দিন থেকে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হচ্ছে বেশি।

তিনি জানান, মৃত্যুর পরে রোগীর স্বজনরা অনেকে পরীক্ষা না করে চলে যাচ্ছেন। পরীক্ষার নমুনা নেওয়ার পরে বেশি নমুনা থাকায় কিছু সমস্যাও হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের যে জনবল আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে