রাজশাহীর রোমনের সাপের জন্য ভালোবাসা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১; সময়: ২:১৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর রোমনের সাপের জন্য ভালোবাসা

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ : সাপকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে মামলার আসামি হয়েছিলেন বোরহান বিশ্বাস রোমন (৩৫)। ছয় মাসের সাজা হয়েছিল। কিন্তু কারাগারে যেতে হয়নি। আপিল করে মামলা থেকে রেহাই পেয়েছিলেন। যে বন বিভাগের সঙ্গে সাপ নিয়ে তাঁর ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেই বন বিভাগ এখন তাঁকে সহযোগিতা করে।

সাপ নিয়ে থাকতে থাকতেই শেষ পর্যন্ত তিনি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক। বোরহানের ভাষ্য, দেশে সাপসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করা হলে তাঁর ফোন নম্বরটিই দেওয়া হয়। খবর- প্রথম আলো

বোরহান বিশ্বাসের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার আফিনেপালপাড়া গ্রামে। বাড়িতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড স্টাডি’ নামের একটি ক্লাব। এখন এই ক্লাবের নাম দিয়েছেন ‘স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টার’। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া প্রায় ৮৫ জন সদস্য রয়েছেন। বোরহান বিশ্বাস নটর ডেম কলেজের নেচার স্টাডি ক্লাবের সদস্য হয়ে একাধিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি স্নাতকোত্তর করেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

তাঁর ভাষায়, কোথাও সাপ ধরা পড়লে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা, সংরক্ষণ করা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সাপের ভূমিকা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা, বিষধর ও নির্বিষ সাপ শনাক্ত করা, সাপে কামড় দিলে কী করণীয়- এই সব বিষয়ে তিনি স্থানীয় স্কুল-কলেজে অনেক প্রচার করেছেন। তিনি চান সাপ প্রকৃতিতে বেঁচে থাক। কোথাও সাপ ধরা পড়ার খবর পেলেই তিনি ছুটে যান।

২০১১ সালে বোরহান বিশ্বাসের পরিচর্যায় থাকা ৮৫টি সাপ জব্দ করেছিল বন বিভাগ। সে সময় তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বোরহানের ভাষ্য, দণ্ড দেওয়া হলেও তাঁকে কারাগারে জেতে হয়নি। কারণ, জব্দ করা সাপগুলো পরিচর্যার জন্য তাঁরই জিম্মায় দেওয়া হয়।

পরে তিনি আপিল করলে ওই দণ্ডটি মীমাংসা হয়ে যায়। তিনি সাপের বিষের ব্যবসা করেন-এমন ধারণা ছিল বন বিভাগের। কিন্তু আদালতে তাঁর কোনো প্রমাণ মেলেনি। ২০১৯ সালের শুরুতে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন।

সম্প্রতি পঞ্চগড়ে একটি নতুন সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ইংরেজি নাম রেড কোরাল কুকরি। এর প্রচলিত বাংলা নাম নেই। সাপটি উজ্জ্বল কমলা ও লাল প্রবাল রঙের। রঙের সঙ্গে মিল রেখে বোরহান সাপটির বাংলা দিয়েছেন কমলাবতী।

বোরহান বলেন, এটি বাংলাদেশের ১০৩তম প্রজাতির সাপ। দেশে উদ্ধার হওয়া এই প্রজাতির এটি দ্বিতীয় সাপ। প্রথম সাপটি মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। উদ্ধারের সময় সাপটি মারাত্মকভাবে জখম ছিল। সাপটিকে বোরহান বিশ্বাস রাজশাহীতে তাঁর সংরক্ষণকেন্দ্রে এনে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

বোরহান বিশ্বাস জানান, প্রথম এই সাপের দেখা মেলে ১৯৩৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে। প্রায় ৮২ বছর পর ২০১৯ সালে আবার উত্তর প্রদেশের খেরি জেলায় দেখা গিয়েছিল রেড কোরাল কুকরি। এ ছাড়া নেপালের মহেন্দ্রনগর, চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্ক, ভারতের নৈনিতাল, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় এই সাপ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবু রেজা তুহিন বলেন, বোরহান বিশ্বাস সাপ উদ্ধার করেন। আহত সাপের চিকিৎসা দেন। সাপে কাটা রোগীদের করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে মানুষকে সচেতন করেন।

তিনি বলেন, সাধারণত মানুষ সাপ দেখলেই মেরে ফেলে। কিন্তু বোরহান বিশ্বাস খবর পেলে সাপ জীবিত উদ্ধার করেন। এতে একটি বন্য প্রাণী রক্ষা পায়। আবার যাঁর বাড়ি থেকে সাপ উদ্ধার করা হয়, তিনিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন।

  • 70
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে