বৃষ্টি নেই, নওগাঁয় আমন চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৩; সময়: ১২:০৩ অপরাহ্ণ |
বৃষ্টি নেই, নওগাঁয় আমন চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ : আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি না হওয়ায় নওগাঁয় আমন চাষাবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আমন চাষাবাদের ভরা মৌসুমেও কৃষকরা ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না।

এতে অনেকটা প্রকৃতিনির্ভর আমন চারা রোপণ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকদের বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে সেচযন্ত্র। শুরুতেই বেড়ে যাচ্ছে চাষের খরচ। এতে করে শুধু সেচ খরচ বাবদ কৃষকের ব্যায় হবে প্রায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলার কমবেশি সব এলাকাতেই এবার খরার কবলে পড়েছে আমন চাষাবাদে। এর মধ্যে নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলার অবস্থা বেশি খারাপ।

বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকরা গভীর-অগভীর সেচযন্ত্র চালু করে আমনের চারা লাগাচ্ছেন। এদিকে, লোডশেডিংয়ের কারণেও কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে সেচ কাজ। সঠিক সময়ে জমিতে সেচ দিতে না পারায় আমনের খেত ফেটে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। সেচের জন্য মাঠে মাঠে ৪ হাজার ৮৬৮টি গভীর নলকূপ, ৪৮ হাজার ৭৯টি অভীর নলকূপ ও ২ হাজার ২২৭টি এলএলপি (লো লিফট পাম্প) সেচযন্ত্র রয়েছে।

সব মিলিয়ে জেলায় ৫৫ হাজার ১৭৪টি সেচযন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৯৫টি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র। বাকি ৩৭ হাজার ৬৭৯টি সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে।

আমনের চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত ও খরার কবলে পড়া আমনের চারা বাঁচাতে ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুইবার সেচ দিতে হয়েছে।

এই মৌসুমে এভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চললে কমপেক্ষ আরও ছয়বার সেচ দিতে হবে। সেই হিসাবে জেলার ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর আমনের ফসল রক্ষায় এবার সেচের খরচ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

কৃষকরা বলছেন, জুনের শেষ সপ্তাহ ও জুলাইয়ের প্রথম চার-পাঁচ দিন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছিল। মাঠের অনেক জমিতে পানিও জমে গিয়েছিল।

কিন্তু তখন জমি প্রস্তুত না হওয়ায় ও বীজতলার চারার বয়স কম থাকায় কৃষকরা ধানের চারা লাগাতে পারেনি। সাধারণত জুলাইয়ের এক-দুই সপ্তাহ পর থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমনের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।

এখন বৃষ্টির দরকার, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। গত ১৫-২০ দিন ধরে নওগাঁয় ভারী বৃষ্টি হয়নি। এই সময়ে কখনো টিপটিপ, কখনো একপশলা বৃষ্টি হলেও বর্ষানির্ভর আমন চাষের জন্য তা যথেষ্ট নয়।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা বলেন, গত ১৫ দিন ধরে দিন ধরে আমাদের এলাকায় একপশলা বৃষ্টিও হয়নি। খরার কারণে চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা জমির মাটি ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।

যেসব জমিতে চারা লাগানো হয়েছে পানির অভাবে ওই সব চারা মরে যেতে বসেছে। খরার কারণে মাটি শুকনা কাঠের মতো হয়ে থাকায় সেচ দিয়ে মাটি ভেজাতে অনেক বেশি পানি লাগছে।

একদিকে খরা আরেক দিকে চলছে লোডশেডিং। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে সেচ দিয়ে মাটি ভেজাতে অনেক বেশি সময় লাগছে। খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

একই উপজেলার দামপুড়া গ্রামের কৃষক জুলফিকার আলী এ বছর ১৩ বিঘা জমিতে আমন চাষ করতে চান। সে অনুপাতে আমনের বীজতলাও প্রস্তুত করেছেন তিনি।

আগেভাগে মাঠ থেকে আমন ধান কেটে সেই জমিতে রবি শস্য আবাদের জন্য জুলাইয়ের মধ্যেই খেতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।

বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে ইতোমধ্যে পাঁচ বিঘা জমিতে চারা লাগিয়েছেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অন্য জমিগুলো চারা লাগানোর জন্য সঠিক সময়ে প্রস্তুত করতে না পারার আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

জুলফিকার আলী বলেন, গত বছরও আষাঢ়-শ্রাবণ মাসত ঠিকমতো বৃষ্টি আছিল না। ডিব টিউব চালায়ে স্যাচ দিয়ে ধান লাগাতে হছিল।

এবারও একই অবস্থা। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসত বৃষ্টি নেই চিন্তায় করা যায় না। এ রকম খরার কারণে ধান আবাদ করতে খরচ ব্যাড়ে যাওছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুসের দুটি ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র রয়েছে। তিনি বলেন, আগে এক বিঘা জমিত পানি দিয়ে ভেজাতে ১৫০-২০০ টাকা করে খরচ পড়তো।

কিন্তু ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছর থেকে সেচ খরচ বেড়ে গেছে। এখন বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে গড়ে ৪০০ টাকা করে খরচ পড়ে। সাত-আটবার করে সেচ দিতে হলে এক বিঘা জমিতে সেচ খরচ পড়ে প্রায় তিন হাজার টাকা।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখনই অতটা চিন্তিত হওয়ার কারণ দেখছি না।

আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। পুরো আগস্ট মাস জুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে।

আশা করছি, সঠিক সময়েই আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হবে। তবে যেসব কৃষক সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছে তাদের খরচ বাড়বে। গত বছরেও মৌসুমের শুরুতে তেমন বৃষ্টি ছিল না। তবে শেষের দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আশা করছি, এবারেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে