নামাজের যেসব ভুল নিয়ে সতর্কতা জরুরি

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৩; সময়: ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
নামাজের যেসব ভুল নিয়ে সতর্কতা জরুরি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। ঈমান আনার পর মুমিনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো নামাজ পড়া। কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। তাই আমাদের জন্য আবশ্যক হলো কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় নামাজ আদায় করা।

মনোযোগ, একনিষ্ঠতা ও ধীরস্থিরতার অভাবে কখনো মুসল্লি অজান্তে বড় কিছু ভুল করে বসেন। অতীতেও মানুষের মধ্যে এমন ভুল দেখা যেত। হাদিসের মাধ্যমে তা অনুমান করা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক সাহাবি মসজিদে এসে নামাজ আদায় করল। রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদের এক কোনায় অবস্থান করছিলেন।

সাহাবি এসে তাঁকে সালাম দিলেন। নবীজি (স.) তাকে বললেন, যাও তুমি আবার নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। সাহাবি ফিরে গেলেন এবং নামাজ আদায় করলেন।

অতঃপর নবীজি (স.)-কে সালাম করলেন। তিনি বললেন, তোমার প্রতিও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং নামাজ আদায় করো।কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। তৃতীয়বার সাহাবি বললেন, আমাকে অবগত করুন।

তখন নবীজি (স.) বললেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তার আগে ভালোভাবে অজু করবে। অতঃপর কেবলার দিকে ফিরবে এবং তাকবির দেবে। কোরআনের যতটুকু তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা পাঠ করবে।

অতঃপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে এবং রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে সেজদা করবে এবং সেজদা থেকে ধীরস্থিরভাবে সোজা হয়ে বসবে।

আবার ধীরস্থিরভাবে সেজদা করবে এবং সেজদা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পুরো নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি: ৬৬৬৭)

উপরোক্ত হাদিসটি সুন্দর নামাজ কীভাবে হয়, তারই এক চমৎকার উপস্থাপনা। এই হাদিস থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত- অবহেলার কারণে নামাজে ভুল করা কাম্য নয়। এই আলোচনায় আমাদের কয়েকটি ভুল নিয়ে আলোচনা করা হলো—যা থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।

১. তাড়াহুড়ো করা: নামাজে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা নবীজি (স.) নামাজের বিধানগুলো ধীরস্থিরভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজে ধীরস্থিরতা অবলম্বনের উপায় হলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির করা। যেমন সেজদায় গেলে সেজদায় ব্যবহৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্থির রাখা।

তাড়াহুড়ো করা লোকদের ‘নামাজ চোর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন রাসুল (স.)। তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি যে তার নামাজ চুরি করে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে কিভাবে নামাজ চুরি করে? তিনি বলেন, সে নামাজে রুকু ও সিজদা পূর্ণ করে না।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২৬৯৫)

২. মনে মনে কিরাত পড়া: কিরাত পাঠ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ঠোঁট ও জিহ্বার ব্যবহার আবশ্যক। জিহ্বা ও ঠোঁট না নাড়িয়ে সম্পূর্ণ মনে মনে কিরাত পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয় না। কেননা নামাজে কোরআন তেলাওয়াত বা পাঠ করতে বলা হয়েছে।

আর তা মুখে উচ্চারণ না করলে প্রমাণিত হয় না। তাকে চিন্তা-ভাবনা বলা হয়, পাঠ বলা হয় না। সুতরাং মনে মনে পড়ার দ্বারা কিরাত আদায় হবে না। এটিই বিশুদ্ধ মত। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৬৯)

‘আমিন’ শব্দও মনে মনে পাঠ করা ভুল। ইমাম সুরা ফাতেহা শেষ করলে মুক্তাদির ‘আমিন’ আস্তে বলা ও জোরে বলা দুটোই শরিয়তের দলিল দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু কোনোভাবেই মনে মনে বলা নয়। আস্তে বলা আর মনে মনে বলা এক কথা নয়। নামাজে ভুল

৩. সেজদার অঙ্গগুলো মাটিতে স্পর্শ না করা: সেজদার সময় অনেকে নাক ও পায়ের আঙুলগুলো ভূমিতে লাগল কি না তা খেয়াল করেন না। অথচ হাদিসের ভাষ্যমতে, সেজদার সময় সাতটি অঙ্গ ব্যবহার করতে হবে।

রাসুল (স.) বলেন, ‘আমাকে সাতটি অঙ্গের ওপর সেজদা করতে বলা হয়েছে। তা হলো—কপালের ওপর; এবং তিনি তার হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন নাক, দুই হাত, দুই টাকনু ও দুই পায়ের আঙুলের দিকে।’ (বুখারি: ৮১২)

মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘কেউ যদি সাত অঙ্গের কোনো অঙ্গ সেজদার সময় ব্যবহার না করে, তবে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না।’ হানাফি মাজহাব অনুসারে, কেউ যদি তিন তাসবিহের চেয়ে বেশি সময় ইচ্ছা করে কোনো একটি অঙ্গ যদি মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে, তবে তার নামাজ হবে না।

সেজদায় পূর্ণ সময় উভয় পা জমিনে রাখা এবং কেবলামুখী করে রাখা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। (দুররুল মুখতার: ১৪৪৭; আহসানুল ফতোয়া: ৩/৯৬; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১১/৮০) নামাজে তাড়াহুড়া, নামাজের রুকু সিজদা

৪. তাকবির না বলেই রুকুতে চলে যাওয়া: ইমামকে রুকু অবস্থায় দেখলে রাকাত ধরার জন্য বহু মানুষ একটি তাকবির দিয়েই রুকুতে চলে যান। অথচ তার জন্য তাহরিমার তাকবির ছাড়াও রুকুতে যাওয়ার জন্য আরো একটি তাকবির পাঠ করা আবশ্যক ছিল। আবার অনেকে রুকুতে যেতে যেতে তাকবিরে তাহরিমা পাঠ করেন।

অথচ বিশেষ অপারগতা ছাড়া তাকবিরে তাহরিমা দাঁড়িয়ে পাঠ করা আবশ্যক। (আল-মুহিতুল বুরহানি: ২/৩০; বাদায়িউস সানায়ি: ১/৪৬৫; ফাতহুল কাদির: ১/২৪৪; আল-বাহরুর রায়েক: ১/৩০২; আদ্দুররুল মুখতার : ১/৪৭৪)

৫. টাইট ও ছোট পোশাক পরে নামাজে দাঁড়ানো: অনেককে দেখা যায়, বেশি আটো পোশাক পরে নামাজে দাঁড়ানোর কারণে ঠিকমতো সেজদা করতে পারেন না। আবার কোনো যুবক এমন গেঞ্জি ও প্যান্ট পরে নামাজে দাঁড়ান যে, সেজদার সময় সতর প্রকাশ পেয়ে যায়।

অথচ নামাজের সময় সুন্দরভাবে রুকু-সেজদা করা এবং সতর ঢেকে রাখা আবশ্যক। নামাজের সময় উচিত হলো- সুন্দর, ঢোলা ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করো।’ (সুরা আরাফ: ৩১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে