আলুর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে আড়তদাররা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চট্টগ্রামে আলুর বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে তারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদাররা (পাইকারি আলুর ব্যবসায়ী) সিন্ডিকেট করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হিমাগার থেকে আলু আনা বন্ধ রেখেছেন। সংকট মেটাতে চট্টগ্রামের হিমাগারেও নেই পর্যাপ্ত আলু। রিয়াজউদ্দিন বাজারে অর্ধশতাধিক আলুর আড়ত রয়েছে। যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আলু এনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন। আড়তদাররা না আনার কারণে খুচরা বাজারেও সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে। ফলে বাজারে আলুর তীব্র সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
আড়তদাররা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করা সম্ভব নয়। ফলে তারা উত্তরবঙ্গের হিমাগার থেকে আলুর ট্রাক আনা বন্ধ রেখেছেন। তবে একটি সূত্র বলছে, আড়তদাররা ভোক্তাদের জিম্মি করে আলুর দাম বাড়াতে ট্রাক আনা বন্ধ রেখেছেন।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ আড়তই আলুশূন্য। শ্রমিকরা অলস বসে আছেন। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও আলু বিক্রি হচ্ছে না। বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। পেঁয়াজ, চিনির পর আলুর দাম বাড়ার পেছনেও বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ টাকার মধ্যেই স্থির ছিল। তবে জুলাইয়ে এক লাফে দাম বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার ইকবাল হোসেন বলেন, হিমাগারে আলুর দাম বলা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া পরিবহণসহ আরও অনেক খরচ আছে। এদিকে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। এত বড় লোকসান দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
আরেক আড়তদার রতন বড়ুয়া বলেন, প্রতিদিন আলু বিক্রি করে কমিশন পাই ২ হাজার টাকা। মোবাইল কোর্ট এসে জরিমানা করে ১০ হাজার টাকা। আড়তদারি করে লাভের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য আলু আনা বন্ধ রেখেছি। কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। আগের দামে বা অতিরিক্ত দামেই বিক্রি হচ্ছে। নগরীর চকবাজারের কাঁচাবাজার, বহদ্দারহাট ও রিয়াজউদ্দিন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৪৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৫৪ থেকে ১৫৫ টাকায়, পাম অয়েল প্রতিলিটার ১২৪ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১২৮ থেকে ১৩০ টাকায়। চট্টগ্রামের মফস্বলের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
আর পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে। ভারত থেকে আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। যদিও সরকার বুধবার ৬৫ টাকা দাম নির্ধারণ করার আগে এসব পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা প্রতিকেজি। তবে কিছু নিুমানের পেঁয়াজ সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারদর : চট্টগ্রামে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির। প্রতিকেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। বড় ও মাঝারি আকারের তেলাপিয়া মাছের কেজি ২২০ থেকে ২৬০ টাকা। আকারভেদে পাঙাশ মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। মাঝারি চিংড়ি প্রতিকেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। নগরীর ফিশারিঘাটে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পাইকারি দাম এখন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। বাজারে পর্যাপ্ত থাকলেও অধিকাংশ সবজিই বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকার বেশি। শুক্রবার প্রতিকেজি বেগুন ৮০, চিচিঙ্গা ৭০, বরবটি ১১০, পটোল ৮০, লতি ৫০, ধুন্দল ৯০, ঢেঁড়শ ৬০, করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।