উত্তরাঞ্চলে ধেয়ে আসছে বড় বন্যা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৩; সময়: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ |
উত্তরাঞ্চলে ধেয়ে আসছে বড় বন্যা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চলতি সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার পূর্বাভাস ছিল আগে থেকেই। এর মধ্যে হঠাৎ করে বুধবার ভারতের উত্তর সিকিমে অতিভারী বর্ষণে তিস্তা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। সেখানকার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ড্যাম (বাঁধ) ভেঙে গিয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জলপাইগুড়িতে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গেও তিস্তাপাড়ে বড় আকারের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের আট বিভাগে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাংয়ের ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে নদীর পানির সমতল দ্রুত বেড়েছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গজলডোবা পয়েন্টে পানির সমতল বুধবার প্রায় ২৮৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে (বর্তমান পানির সমতল ১১০ দশমিক ৩০ মিটার) এবং দোমুহনী পয়েন্টে সকালে প্রায় ৮২ সেন্টিমিটার বেড়েছে (বর্তমান পানির সমতল ৮৫ দশমিক ৯৫ মিটার)। এখনও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদীতে বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।

আরেক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী শনিবার নাগাদ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, পুনর্ভবা, কুলিক, টাঙ্গন, ইছামতী, যমুনা ও যমুনেশ্বরী নদীর পানির সমতল কখনও কখনও দ্রুত বাড়তে পারে।

এ সময় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মহানন্দা, ছোট যমুনা, করতোয়া, আত্রাই ও গুড় নদীর পানির সমতল কখনও কখনও দ্রুত বাড়তে পারে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ভারতের সিকিমে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশের তিস্তা নদীর উপকূলবর্তী এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বাঁধের পানি পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তিস্তা নদীতে প্রবেশ করে।

এনডিটিভির তথ্য অনুসারে, এরই মধ্যে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তা নদীর পানি ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পানি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে নীলফামারী জেলার তিস্তা নদীর ডালিয়া বাঁধে পৌঁছে যাবে। ফলে আগামীকাল সন্ধ্যার পর থেকে তিস্তা নদীর উপকূলবর্তী নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ব্যাপক এলাকার ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রংপুর অফিস জানায়, তিস্তার পানি হুহু করে বেড়ে চলায় রংপুরের পাঁচ জেলায় ভয়াবহ বন্যার সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

অসময়ে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় নদীপাড়ের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানিয়েছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চরের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনুরোধ করছি। বন্যায় যেন মানুষের জানমালের ক্ষতি না হয়, সে লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ করছে। বন্যা স্থায়ী হলে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং বন্যা শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। অবস্থার অবনতি হলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে