নিয়ন্ত্রণে নেই পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য
নম্রতা জয়সোয়াল : সুন্দর নির্মল পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন নগরী রাজশাহী। এই শহরে অন্যতম সুন্দর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে অতি পরিচিত পদ্মার পাড়।
শুধু স্থানীয়রা নয় দেশ-বিদেশের অনেক জায়গা থেকে রাজশাহীতে বেড়াতে আসা মানুষগুলো পদ্মা পাড়ে আসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আট থেকে আশি সকল বয়সের মানুষের আনাগোনা থাকে পদ্মাপাড়ে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখরিত থাকে মানুষের পদচারণায় পদ্মাপাড়। পদ্মা পাড়ের যে নির্মল বাতাস আর নৈসর্গিক পরিবেশ মানুষের মনে প্রশান্তি আনে।
বিলুপ্ত হচ্ছে সেই পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্য ও পরিবেশ। পদ্মা পাড়ের বিভিন্ন স্থানে নদীর সংলগ্ন বাঁধের উপরে এবং দুই পাশে চলছে গরু ছাগল এবং ভেড়া পালন। বিভিন্ন জায়গায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ।
এ শহরের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পদ্মাপাড়। মহানগরীর বড়কুঠি থেকে বুলনপুর ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মাপাড় দখল হয়ে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে।
পদ্মা পাড়ের বিভিন্ন স্থান দখল করে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের জায়গা দখল আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে পদ্মাপাড়ের বিনোদনের জন্য যাওয়া দর্শনার্থীরা নির্মল পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নদীর পার সংলগ্ন রাস্তা ও সিঁড়িগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুরো পদ্মা পাড় জুড়ে শুধু দোকান আর দোকান বাদামওয়ালা, চটপটি, ফাস্টফুড, চা কফির নানা বড় বড় রেস্টুরেন্ট সহ আরো ভ্রাম্যমান দোকান। দিন দিন পদ্মাপাড় ঘিরে উৎপাত আর দৌড়ান্ত বাড়ছেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
যার কারনে পদ্মাপাডের সুন্দর সুস্থ স্বাভাবিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। খাবার দোকানের কারণে বাড়ছে ভীড়। যেখানে খাবার দোকান থাকে সেখানে স্বভাবতই প্রচুর ময়লা হয়।
সেই সাথে হতে হচ্ছে জনসাধারণের ভোগান্তির শিকার।এসব ব্যবসায়ীদের জন্য পদ্মাপাড়ে আসা মানুষদের সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। তারা সারি, সারি চেয়ার পেতে পদ্মাপাড় নিজেদের দখলে নিয়েছে।
এরা নিজেদের ব্যবসার জন্য সৃষ্টি করেছে মানুষ ধরার ফাঁদ। চেয়ার দিয়ে বোঝাই করা পদ্মাপাড়ে একটিও বসার জায়গা না থাকায় যখন মানুষ চেয়ারে বসতে যাচ্ছে। তখন বইতে হচ্ছে বিলের বোঝা।
তাছাড়া চেয়ারে বসলেই দিতে হচ্ছে জনপ্রতি ২০-১৫০ টাকা জোরপূর্বক। টাকা না দিলে বা খাবার না খেলে দুর্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করা হচ্ছে।
চেয়ারে বসলেই খেতে হচ্ছে দোকানের খাবার। একই চিত্র দেখা যায় টি-বাঁধে। টি-বাঁধেও কোন পথই নেই হেঁটে যাওয়ার।
সেই সাথে মুক্ত মঞ্চ, বড়কুঠির পাড় দিয়ে উপরের দিকে মানুষের বসবাসও দেখা দিয়েছে। টিন দিয়ে বস্তি বানিয়ে তার সাথে একটি করে দোকান তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেছে গ্রাম থেকে আসা লোকজন।
মুক্তমঞ্চে ঘুরতে আসা ভদ্র এলাকার বাসিন্দা শামসুর জামান বলেন, অস্থায়ী দোকানগুলো যেভাবে জায়গা দখল করা শুরু করেছে এ জন্য বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে কিংবা বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করাই যায় না। ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের কারণে মানুষ হয়ে উঠেছে অতিষ্ট। নেই কোনো সুস্থ পরিবেশ। এ অবস্থা দীর্ঘদিন যাবৎ। পদ্মা পার কারো নিয়ন্ত্রণে নেই।
পুঠিয়া এলাকা থেকে সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন কাওসার আলী, তিনি বলেন,পদ্মার পাড়ে বসবার মতো কোন জায়গা নেই। ঘুরতে এসে নদী উপভোগ করব কী! চটপটি ফুচকার দোকানপাট অনেক বেশি। পদ্মা পাড়ের একটা সুস্থ পরিবেশ দরকার।
পদ্মার টি-বাঁধের চটপটি ব্যবসায়ী খোরশেদ আলী, গোলাম কবিরের দাবি পদ্মা পাড়ে তাদের চেয়ারেই ব্যবসা চলে।
এই ব্যবসা করে তাদের সংসার চলে। সামনের দিকে চেয়ার না দিলে বেড়াতে আসার লোকজন চেয়ারে বসে না এবং তাদের চটপটিও খায় না। এজন্য তারা বাঁধের সামনের দিকে চেয়ার বসিয়ে ব্যবসা করছেন।
শুধু টি বাঁধই নয়। লালনশাহ মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেন, মন্নুজান রবীন্দ্র-নজরুল মুক্তমঞ্চসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর নেই কোন পরিবর্তন।
এসব বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ বনি আহসান বলেন, পদ্মাপাড়ের জায়গাগুলো সিটি কর্পোরেশেন থেকে লীজ প্রদান করা হয়েছে। যার এসব ব্যবস্যা বাণিজ্য করছে তারা আশেপাশের লোকজন। তবে যারা এভাবে সৌন্দর্য নষ্ট করছে বা ঘুরতে আসা মানুষদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাদেরকে এসব বিষয় নিয়ে সতর্ক করা হয়। তবে তাদের কে একেবারে সরানো সম্ভব না। যেহেতু তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ কর আসছে। তবে আস্তে আস্তে তাদেরকে নির্দিষ্ট জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।