এক বছরে কর্মক্ষেত্রে ঝরেছে ১৪৩২ শ্রমিকের প্রাণ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩; সময়: ৩:০৯ অপরাহ্ণ |
এক বছরে কর্মক্ষেত্রে ঝরেছে ১৪৩২ শ্রমিকের প্রাণ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চলতি বছর দেশের বিভিন্ন শ্রম খাতে ১ হাজার ৪৩২ শ্রমিকের প্রাণ গেছে বলে একটি বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।

সংস্থাটির হিসাবে, গত বছরের তুলনায় এবার শ্রমিকদের প্রাণহানি বেড়েছে ৪৮ শতাংশ; সবচেয়ে বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে পরিবহন খাতে।

‘বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেইফটি, হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশন’ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে নিহত হয়েছিলেন ৯৬৭ শ্রমিক, আহত হন ২২৮ জন। কিন্তু ২০২৩ সালে মারা যান ১ হাজার ৪৩২ জন, আহত হন ৫০২ জন।

১৫টি সংবাদপত্র ও মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরির কথা জানিয়েছে ওশি।

সংস্থার ভাইস চেয়ারপারসন এসএমা মোর্শেদ বলেন, এ বছর কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৩২৯ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মারা গেছেন ১ হাজার ১০৩ জন।

খাত অনুযায়ী, এ বছর পরিবহনখাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ শ্রমিক নিহত হয়েছেন, গত বছর এই খাতে মারা যান ১০৫ জন।
এক বছরে কর্মক্ষেত্রে ঝরেছে ১৪৩২ শ্রমিকের প্রাণ

এছাড়া চলতি বছর ২২০ জন দিনমজুর, নির্মাণ খাতে ১৪৯ জন, ১৪৬ জন কৃষিশ্রমিক (এর মধ্যে বজ্রপাতে ৭১ জন), পোশাকশিল্পে ৬৪ জন, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ৯৪ জন, মৎস্যখাতে ৫৩ জন, সেবাখাতে ২৬ জন, সিরামিক শিল্পে ১৭ জন, চামড়াশিল্পে ৪ জন, ইটভাটায় ১১ জন, জাহাজভাঙ্গা শিল্পে ৭ জন, চা শ্রমিক একজন এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তিনজনের প্রাণ গেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহশ্রমিকদের শারিরীক নির্যাতন, দেয়াল, ভবন, ছাদ ও ভূমিধসসহ বিভিন্ন কারণে এই শ্রমজীবীদের মৃত্যু হয়েছে।

সুপারিশ

শ্রমিকদের অকাল মৃত্যু রোধে কর্মক্ষেত্রকে আরও নিরাপদ করার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে ওশি ফাউন্ডেশন।

>> বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগ।

>> পোশাক খাতের মত অন্যান্য সেক্টরেও শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেইফটি কমিটি গঠন।

>> কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা।

>> আহত শ্রমিকের পুনঃর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভূক্ত করা, শিল্প খাতের সকল সেক্টরে ‘এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম’ (ইআইএস) চালু করা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের জন্য সরকারিভাবে সঠিক ডেটাবেইজ তৈরি করা।

>> জাহাজভাঙা এলাকায় মালিকপক্ষের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আধুনিকায়ন করা, কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

>> শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরপত্তা নীতিমালা-২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন দেওয়া।

>> শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো।

ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সাকি রিজওয়ানা, রিসার্চ অ্যান্ড মনিটরিং অফিসার নূর আলম, কেস ম্যানেজম্যান্ট অফিসার নুসরাত জাহান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে