পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৪; সময়: ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ |
পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দুর্বার ছুটে চলা শেখ হাসিনাই ফের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। এক নতুন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যার রেকর্ড টানা চতুর্থবারের মতো সরকারপ্রধানের পদ অলংকৃত করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল বিজয় এনে দিয়ে ক্যারিশমেটিক এ নেত্রী পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আরেক রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন।

দেশ ও জাতির স্বার্থকে সর্বদা সবার ওপরে স্থান দেওয়া শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বলেন, আমার জবাবদিহি দেশের জনগণের কাছে। দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলে নির্বাচন নিয়ে আর কে কী বলল, তা নিয়ে মাথা ঘামাই না।

গতকাল সকাল ৮টায় ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুথ থেকে বের হয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ।

হতে পারে এটি ছোট দেশ, কিন্তু এর জনসংখ্যা অনেক বেশি। জনগণই আমাদের প্রধান শক্তি। কাজেই কে কী বলে, তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। অনেক বাধা মোকাবিলা করে একটি অনুকূল নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

অনেক বাধা-বিপত্তি ছিল; কিন্তু দেশের মানুষ ভোটাধিকারের ব্যাপারে সতর্ক ছিল। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর জাতীয় নির্বাচন হয়। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।

বিএনপির ভোট বর্জন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষ এই নির্বাচন গ্রহণ করল কি করল না- এটি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে টেররিস্ট পার্টি কী বলল, না বলল তা আমি কেয়ার করি না। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।

প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছলে ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফেরদৌস আহমেদ তাদের স্বাগত জানান।

এ কেন্দ্রে শেখ রেহানা উপস্থিত থাকলেও তিনি ও তার ছেলে ববি গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন। সে সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত।

নৌকা প্রতীক জয়লাভ করবে আশা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আবারও জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছে, তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।

জনগণের ওপর এই বিশ্বাস ও আস্থা আমার আছে। ২০০৯ সাল থেকে দেশে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা আছে বলেই দেশের এত উন্নতি হয়েছে। আমাদের সামনে আরও কাজ আছে, সেগুলো আমরা সম্পন্ন করতে চাই।

বিএনপি-জামায়াত চক্র নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে ট্রেনে, বাসে আগুন লাগিয়ে এবং মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করেছে। এই চক্র গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতাও চায় না।

তারা জনগণের কল্যাণে কাজ করে না। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। তারা কখনো নির্বাচনেই বিশ্বাস করেনি। এক সামরিক শাসক সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বিএনপির সৃষ্টি করেছে।

কাজেই ভোট কারচুপি, সিল মারা আর মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়াটাই তাদের চরিত্র। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই ভোটের নামে প্রহসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি আসন।

এরপর থেকেই বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে। ভোট কারচুপি করতে পারবে না বলেই তারা নির্বাচনে আসে না। নির্বাচন বানচাল করতে তারা মানুষ হত্যা করে।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যার সময় জার্মানিতে ছিলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর প্রায় অর্ধযুগ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন তিনি।

হাল ধরেন স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। প্রায় ৪৪ বছরের রাজনৈতিক পথচলায় ভোটের অধিকার লড়াইয়ে অবিচল পথ হেঁটেছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা ২৩ জুন প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার শপথগ্রহণ করেন তিনি।

সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি সরকার গঠন করেন। গতকালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয়ে শেখ হাসিনার পঞ্চমবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দ্বার উন্মোচিত হলো।

এতবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও রেকর্ড হবে এটি। সব মিলিয়ে নতুন বছরে নতুন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন শেখ হাসিনা। এ পর্যন্ত তিনবার বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্বও পালন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে