অনলাইন জুয়ার এজেন্ট কর্তৃক নিঃশ্ব শতশত তরুণ, জুয়ার টাকায় ব্যয়বহুল ভবন নির্মাণ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০২৪; সময়: ১০:০২ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন জুয়ার এজেন্ট কর্তৃক নিঃশ্ব শতশত তরুণ, জুয়ার টাকায় ব্যয়বহুল ভবন নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, তাড়াশ: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়ার সুপার এজেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে।সে উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের পংরৌহালী গ্রামের বাসিন্দা। জানা যায়, পংরৌহালী গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়ার সুপার এজেন্ট আতিক হোসেন।

আতিক হোসেন শুধু অনলাইন জুয়ার সাথেই জরিত নয়। সে বিভিন্ন মাদক ব্যবসাসহ নানান প্রকার অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথেও জরিত রয়েছে বলে অনেকের ধারণা। বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, আতিক হোসেন, দেশের বিভিন্ন কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখার নাম করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগে ও জেলায় অফিস নিয়ে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, অনলাইন জুয়া খেলার এ্যাপস্ (1x) ওয়ানএক্স বেটসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ বেট একাউন্ট আইডি খুলে দিয়েছে শতশত নানা পেশাজীবি মানুষদের। অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্রতি মানুষ দিন দিন আশক্ত হয়ে পরছে বেপোরোয়া গতিতে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পংরৌহালী গ্রামের আতিক হোসেন, অত্যান্ত হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। অথচ বর্তমানে সে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা কামিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই বলেন, আতিক হোসেনের বাবার সংসার জোড়াতালি দিয়ে চলতো।

অথচ কুদ্দুসের ছেলে আতিক হোসেন অবৈধ অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকেই তিন থেকে চার বিঘা জমি কিনেছেন আতিকের বাবা এবং নিজ গ্রামের বাড়িতে তিন তলা ফাউন্ডেশনকত ব্যয়বহুল মুল্যের একটি বিল্ডিং ভবন নির্মাণ করছেন। ঘরের কাজ চলমানাধীন।

উক্ত তিনতলা ফাউন্ডেশনকৃত বিল্ডিং ভবনটির কাজ শেষ করতে প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এত টাকার উৎস কি? আর কোথা থেকেই বা আসছে এই টাকা গুলো। প্রশ্ন জনমনে। সচেতন মহল জানান, আতিকের বাবার এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরাইতো। অথচ বর্তমানে তাদের সাংসারিক গল্পটা আলাউদ্দিনের চেরাগ পাওয়ার মত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আতিক হোসেন বছরের বেশিরভাগ সময় থাকেন দেশের বিভিন্ন শহরে, তা আবার গাঁ ঢাকা দিয়ে। আর গ্রামের বাড়িতে আসেন কালেভাদ্রে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, দেশের এমন কিছু আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করেন, যা এক রাতের হোটেল ভাড়া দিয়ে গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছু মধ্যেবিত্ত পরিবারের মাসিক খরচ চলে যাবে ভালভাবেই। আতিক হোসেন তার বাবার কাছে ২-৩ বছর পূর্বের সাধারণ আতিক নেই, সে হয়েছে বর্তমানে টাকা কামানোর মেশিন।

পঁচিশ বছর বয়সী আতিক হোসেনের নামের চারপাশ জুড়ে রয়েছে নানান ধরনের বিশেষণ বা পরিচিতি। কেউ জানে তাকে অনলাইন জুয়ার সুপার এজেন্ট হিসেবে, আবার কেউ কেউ আক্ষায়িত করেছেন ক্যাচিনোর সম্রাট হিসেবে। অনেকের ধারণা বেনামিও ব্যাংক একাউন্টসহ বিভিন্ন গোপনীয়তার মাধ্যমে জমিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। যার তদন্ত করলে প্রমাণ মিলতে পারে।

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বেশিরভাগ নওগাঁ ইউনিয়নের হাইস্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শতশত ছাত্র তরুণ যুবকসহ নানান পেশাজীবি মানুষ নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়ায় আশক্ত হয়ে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ হলেও তা চলছে জোরালো ভাবেই। অথচ দাপটের সাথে সেই অবৈধ আর নিষিদ্ধ কাজ গুলোই একের পর এক করে যাচ্ছে জুয়ারি এজেন্ট আতিক হোসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনলাইন জুয়ায় নিঃস্ব হওয়া বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, নিষিদ্ধ জুয়ার মাধ্যমে আমরা নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। তারা আরও জানান, আতিক হোসেনের বাৎসরিক আয় বর্তমানে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা। আর আমরা ভুক্তভোগীরা এখন পথের ভিখারি।

বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, রাশিরাশি টাকা কামানোর দাপটে মদ আর নারী আতিক হোসেনের নিত্যদিনের সঙ্গী । সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম এলাকায় অনলাইন জুয়া প্রচার প্রসারের একমাত্র পরিচিতি মাধ্যম আতিক হোসেন।

আতিক হোসেনের দৌরাত্ম্য আর খুটির জোর কোথায় জানতে চায় জুয়ায় সর্বস্বান্ত হওয়া ভুক্তভোগীদের পরিবারেরা।

আতিক হোসেনের পেতে রাখা অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে লোকজন বিভিন্ন অপরাধ ও অপকর্মের সাথে জডিয়ে পড়ছেন দিন দিন। ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক চরম অশান্তি।
আর এ কারণে এলাকায় চুরি, ডাকাতি ছিনতাইসহ নানান প্রকার অপরাধ, অপকর্ম ও দূর্নীতি বেড়ে গিয়েছে মর্মে অনেকের ধারণা।

এ বিষয়ে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস না পেলেও গোপনে ও নীরবে তাদের প্রাণের দাবি অনলাইন জুয়ার সুপার এজেন্ট আতিক হোসেনের বিরুদ্ধে প্রশাসন যেন তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আতিক হোসেন বিভিন্ন ধরনের অবৈধ বেট একাউন্ট-আইডি খুলে দেওয়াসহ বিকাশ, রকেট ও নগদের একাউন্টের মাধ্যমে নিষিদ্ধ বেট একাউন্টে টাকা ডিপোজিট ও উইথড্র করার সহযোগিতা করে থাকেন।

এ সকল বিষয়ে দেশের সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা ভাল রাখার জন্য স্বর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাদক ও জুয়াসহ সকল দূর্নীতির বিরুদ্ধে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে। এবং সেই সাথে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিত বলে অনেকে মনে করেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে