রাজশাহীতে তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪; সময়: ৯:১৪ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিদেক: রাজশাহীতে তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আমের রাজধানী রাজশাহী অঞ্চলে গাছ থেকে আমের গুটি ঝড়ে পড়ছে। এছাড়া বোরো মৌসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলের ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এদিকে তীব্র গরমে বাড়ছে গরমজনিত রোগ। আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

রাজশাহীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপদাহ। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। রাজশাহীতে বইছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০,২৪ ও ২৬ নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, গরমে অনেক শিশু ডায়রিয়া, হাঁপানি, জ্বরে ভুগছেন।

এছাড়াওহাসপাতালগুলোর আউটডোরে এসব রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিমোনিয়া রোগির সংখ্যা বেশি মাত্রায় বাড়তে শুরু করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । এরইমধ্যে রোগীর চাপে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগির জন্য শয্যা সংখ্যা সংকুলান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে মানুষের চলাচলরত রাস্তার মেঝেতে থাকছেন রোগিরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৪৭ জন গরমজনিত রোগি ভর্তি রয়েছে। যারমধ্যে ৩২ জনই শিশু। যাদের অধিকাংশই ডায়েরিয়া ও নিমোনিয়ায় আক্রান্ত । নওগাঁর মান্দা থেকে আসা আব্দুর রহমান কন্যা সন্তান নিয়ে রামেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভর্তি করেছেন, তিনি জানান,গত পাঁচদিন ধরে তার ৪২ দিনের শিশুর পাতলা পায়খানা জ্বর।

পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারে শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে। পারুল আখতার তার নাতির তিনদিন ধরে পাতলা পায়খানা ও বমি এবং জ্বর রয়েছে। কিন্তু শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নঁওগার জোতবাজার এলাকার নাজিমুদ্দিন তার নামে তিন বছরের এক শিশুকন্যাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। গত রোববার রাতে জ্বর ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ এনে খাওয়ানো হয়ে তাকে। এরপর সামান্য জ্বর কমলেও কমছিল না পাতলা পায়খানা।

এরপর পাতলা পায়খানা কমার পর আবারও জ্বর আসে তার। সঙ্গে আবারও শুরু হয় পাতলা পায়খানা। এভাবে থেমে থেমে চলতে থাকে। নিরুপায় হয়ে অবশেষে চিকিৎসা নিতে আসে রামেক হাসপাতালে ওই শিশুর চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদিকে, বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়।

সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশি বার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি ভুক্তভোগী হয়। তাদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে টেপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে দূষিত হয়।

অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের (ইএমও) ইনচার্জ ডা: শংকর কে বিশ্বাস জানান,এখনো আমাদের হাসপাতালে রোগির পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে ‘আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গরম এসেছে। এখন গরম যত বাড়ছে, ডায়রিয়া রোগিও তত বাড়ছে। এক্ষেত্রে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসকের।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে দেশ। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৭ শতাংশ। গতকালের তাপমাত্রা চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চলমান তাপপ্রবাহ আরও বিস্তার লাভ করতে পারে।

এদিকে তাপপ্রবাহের কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে।

অপরদিকে, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখুন। এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে