বেশি পানি পানে কি আসলেই উপকার, না শুধুই ভুল ধারণা, যা বলছেন বিশেজ্ঞরা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪; সময়: ১২:৩৮ অপরাহ্ণ |
বেশি পানি পানে কি আসলেই উপকার, না শুধুই ভুল ধারণা, যা বলছেন বিশেজ্ঞরা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দৈনন্দিন জীবনে পানি পানের বিকল্প কিছু নেই। বিশুদ্ধ পানির অপর নাম বলা হয় জীবন। শরীরকে সঠিকভাবে সক্রিয় থাকার জন্য যেসব কাজ রয়েছে যেমন, খাবারের পুষ্টিগুণ ছড়ানো, বর্জ্য নিঃসরণ করা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা এবং শরীরের ভেতরে অধিকাংশ রাসায়নিক বিক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পানি।

পানি পানে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করে থাকে। চেহারায় বয়সের ছাপ অনেক দেরিতে পড়ে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এসবসহ আরও বিভিন্ন পরামর্শ শোনা যায় পানি পান নিয়ে। তবে এমন কিছু পরামর্শ ভুল প্রমাণিত হয়েছে বলে সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।

বেশি পানি পানে কি বেশি উপকার: গবেষণায় উঠে এসেছে বিশুদ্ধ পানি সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে মানুষ প্রয়োজনের থেকে বেশি বেশি পান করছে। আবার পানি নিয়ে কিছু তথ্য ছড়ানোর কারণেও পানি পানের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন যত বেশি পানি পান করবে তত সুস্থ থাকবে, ত্বক ভালো থাকবে, শক্তিশালী হবে ও ওজন কমবে। আবার দাবি করা হয় বেশি পানি পানে নাকি ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে।

প্রকৃত অর্থে শরীরে যতটুকু পানির প্রয়োজন, ততটুকু পান করাই সুস্থতার জন্য যথেষ্ট। এর থেকে বেশি পরিমাণ পানি পানে যে উপকার মিলবে, এমন তথ্যের সেরকম কোনো প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কী পরিমাণ পানি প্রয়োজন: প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত কী পরিমাণ পানি পান প্রয়োজন, সেটি নির্ধারণের জনপ্রিয় হচ্ছে আট বাই আট ফর্মূলা। অর্থাৎ, প্রতিদিন আটবার আট আউন্স (২৪০ মিলিমিটারের কিছুটা কম) করে পানি পান করা। সাধারণত এক গ্লাসে এই পরিমাণ পানি ধরে। এ হিসাব অনুযায়ী কেউ সারাদিনে ৮ গ্লাস পানি পান করলে আট আউন্স বা দুই লিটার পরিমাণ পানি পান হয়। এর বাইরে চা, কফি, শরবতসহ অন্যান্য পানীয় তো রয়েছেই। তবে পানি পানের এই আধুনিক ফর্মূলাকে আধুনিক বিজ্ঞান সমর্থন করে না।

২০২২ সালে অ্যাবারডিন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন আট গ্লাস বা প্রায় দুই লিটার পানি শরীরে প্রয়োজনের থেকে বেশি হয়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য দিনে পানির আদর্শ পরিমাণ হচ্ছে প্রতিদিন দেড় লিটার থেকে ১ লিটার ৮ মিলিমিটারের মতো। অর্থাৎ, প্রতিদিন ছয় থেকে সাত গ্লাস বা এর সামান্য একটু বেশি পান করলেই হবে। বিভিন্ন দেশের ২৩ জন বিজ্ঞানীর সঙ্গে সমন্বয় করে পানি পানের এই পরিমাণ ঠিক করা হয়েছে।

এর মধ্যে চা, কফি ও শরবতসহ অন্যান্য সব পানীয়ও অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে কেউ এক গ্লাস শরবত পান করলে তিনি চাইলে এক গ্লাস পানি বাদ রাখতে পারেন। তবে পানীয় হিসেবে পানিই সব থেকে স্বাস্থ্যকর। কেননা, এতে কোনো ক্যালোরি নেই। অন্যান্য পানীয় শরীরকে আর্দ্র করে ঠিকই, কিন্তু চা, কফি, ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় এবং অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় মূত্রবোর্ধক হয়ে থাকে। ফলে শরীর আর্দ্র হলেও তা প্রস্রাবের মাধ্যমে দ্রুত বের হয়ে যাবে।

যারা গরম ও আর্দ্র পরিবেশে থাকেন, উচু কোথাও বসবাস করেন, অনেক কায়িক পরিশ্রম করতে হয়, ব্যায়াম বা খেলাধুলা করতে হয়, অন্তঃসত্ত্বা বা বুকের দুধ পান করানো নারীদের অন্যদের তুলনায় বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তৃষ্ণা পাওয়া মানে কী বিপদ: পানি নিয়ে আরও একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, কারও তৃষ্ণা পেলে তিনি ইতোমধ্যে বিপজ্জনকভাবে পানিশূন্যতায় ভুগছেন। পানিশূন্যতার অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে গাঢ় হলুদ প্রস্রাব, ক্লান্তিবোধ, হালকা মাথাব্যথা বা ঘোরানো, মুখ-ঠোঁট শুষ্ক অনুভব করা ও দিনে চারবারের কম প্রস্রাব করা। এসব লক্ষণ থাকার অর্থ যতটা তরল গ্রহণ করছেন, তার থেকে বেশি নিঃসরণ করছেন। কারণ, তৃষ্ণা পাওয়া হচ্ছে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

শরীর পানিশূন্য হলে সুস্থ শরীর ও মস্তিষ্ক সেটি শনাক্ত করে এবং তৃষ্ণার অনুভূতি জাগায়। কারণ, মানুষ যেন পানি পান করে। পানিশূন্যতা দেখা দিলে শরীরে এক ধরনের হরমোনও নিঃসরণ হয়। যা কিডনিকে প্রস্রাব ঘন করে পানি সংরক্ষণের জন্য সংকেত দেয়। শরীর এক থেকে দুই শতাংশ পানি হারিয়ে ফেললে পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো দেখা দেয়া শুরু করে। যতক্ষণ না পুনরায় সেই পানি পানের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত পানিশূন্যতা বাড়তেই থাকে। এমনকী তা মারাত্মক হতে পারে। আর এর অর্থ এই নয়, পানি তৃষ্ণা মানেই শরীর বিপজ্জনকভাবে পানিশূন্য হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা অনেকাংশে সম্মত হয়েছেন যে, শরীর যে পরিমাণ পানি পানের সংকেত দেয়, তার থেকে বেশি তরলের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু হ্যাঁ, তৃষ্ণা পাওয়ার পরও যদি পানি পান না করেন, তাহলে সেটি শরীরে চাপ সৃষ্টি করবে। আবার গুরুত্বপূর্ণ যে, তৃষ্ণার অনুভূতি শরীর ৬০ বছরের পর তেমন একটা সংবেদনশীল থাকে না। এ কারণে অল্প বয়সীদের তুলনায় বয়স্কদের পানিশূন্যতার সম্ভাবনা বেশি। এ ক্ষেত্রে বয়স হলে তৃষ্ণার ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। বেশি পানি পানে ত্বকের উপকার হয়, প্রচলিত এমন দাবির পেছনে বিশ্বাসযোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের অভাব রয়েছে।

বেশি পানি বিপজ্জনক: শরীরে প্রয়োজনের থেকে বেশি পানি পান কখনো কখনো তা বিপজ্জনক। কারণ, অতিরিক্ত পানি রক্তে সোডিয়ামের তরলীকরণ ঘটায়। এতে মস্তিষ্কে ও ফুসফুসে পানি জমে যায়। কেননা, রক্তে সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য শরীর এই অতিরিক্ত তরল বিভিন্ন জায়গায় জমা করে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে