নামাজ-রোজা করতে দেখে দস্যুরা অত্যাচার কম করেছে : জয় মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর : আমরা নামাজ-রোজা করতাম জেনে সোমালিয়া দস্যুরা আমাদের ওপর নির্যাতন বা অত্যাচার কম করেছে। আমাদের জিম্মি করার পর দস্যুরা আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার করতো।
তবে যখন দেখেছে আমরা নিয়মিত নামায পড়ছি এবং রোজা রাখছি তখন তাদের মন নরম হয়। এরপর থেকে তারা নরম সুরে আমাদের সাথে কথা বলে এবং অত্যাচারের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
কখনও ভাবিনি আমরা জীবিত বাড়ি ফিরে আসব। ভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সোমালিয়া জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া সাধারণ নাবিক (ওএস) নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ।
বুধবার সকালে জয় মাহমুদ তার গ্রামের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে ফিরে আসেন। জয় মাহমুদের ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে এক নজর দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করেন। জয় মাহমুদকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। তার ফিরে আসায় অনেকেই আনন্দ প্রকাশ করেন।
বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জয় মাহমুদ বলেন, জলদস্যুরা যখন আমাদের জিম্মি করে তখন আমরা ভাবিনি বেঁচে বাড়ি ফিরবো। বন্দুকের নলের মুখে আমদের থাকতে হয়েছে। প্রতিটি মহুর্ত ছিলো আতঙ্কের। প্রতিটি দিন মনে হয়েছে অনেক দিন।
বন্দি দশার ৩৩ দিন মনে হয়েছে ৩৩ বছর। প্রতিটি দিন কেটেছে আতঙ্ক ও কষ্টের মধ্যে। শুধু নামাজ পড়েছি আর আল্লার কাছে দোয়া চেয়েছি। তবে আস্তে আস্তে তারা যখন স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে তখন মনে একটু একটু করে সাহস পাই আমরা।
ঈদের দিন ঈদ মনে হয়নি। ঈদে শুধু নামাজ পড়তে পেরেছিলাম আর কিছুই করতে পারিনি। এবার ঈদের আনন্দ ছিল না। এখন বাড়ি ফিরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।
জয় বলেন, তিনি বিশ্রাম করতে চান। এছাড়া প্রিয় স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতে চান। এই কথাগুলো বলেই তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।
এদিকে জয় মাহমুদ সুস্থ্যভাবে বাড়ি ফিরে আসাতে জয়ের সহপাঠিরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
জয়ের মা আরিফা বেগম বলেন, আমার বুকের ধন আমার বুকে ফিরে এসেছে এটাই বড় আনন্দ। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহ যে আমার বুকের মানিককে ফিরিয়ে দিয়েছেন এজন্য তার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই।
এবার আমদের কাছে ঈদ ছিলোনা। বুকের ধন জয় জীবিতি ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন কেটেছে। সে জীবিত বাড়ি ফিরে আসায় আমাদের এখন ঈদের দিন মনে হচ্ছে।
জয়ের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, আমার ছেলে আজ (বুধবার) সকালে বাড়ি ফিরেছে। আমরা খুব আনন্দিত। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশবাসী, জাহাজ কর্তৃপক্ষ, মিডিয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহপাকের কাছে শত কোটি শুকরিয়া জানাই।
জয়ের বৃদ্ধ দাদি জানান, আমার নাতি বাড়ি ফিরে এসেছে তাই মনে শান্তি পাচ্ছি। কত যে কান্না করেছি তা বলে বুঝানো যাবেনা। আল্লাহপাক আমার নাতিকে দীর্ঘ জীবন দান করুন এটাই আমার চাওয়া।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এর মধ্যে জয় মাহমুদ একজন।