গুরুদাসপুরে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে দিনব্যাপী ইউএনও’র মাইকিং

প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৪; সময়: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ |
গুরুদাসপুরে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে দিনব্যাপী ইউএনও’র মাইকিং

এসএম ইসাহক আলী রাজু, গুরুদাসপুর (নাটোর) : নাটোরের গুরুদাসপুরে তিন ফসলি জমিতে মাটি কেটে পুকুর খননে প্রশাসনের অভিযান করেও কোনো ভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না পুকুর খনন। পুকুর খননকারীরা কৌশল বদলে প্রশাসনের অগোচরে রাতের দ্বিতীয় প্রহরে চলছে তিন ফসলি জমিতে মাটি কেটে পুকুর খননের কাজ। একারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর ১৩ ধারা মোতাবেক ‘মাটির উপরি-স্তর কর্তন ও ভরাটের দণ্ডের কথা তুলে ধরে পুকুর খনন রোধে মাইকিং করে প্রচার করে যাচ্ছে।

সারাদিন ব্যাপী মাইকিংয়ে বলা হয়- ‘যদি কোন ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিরেকে আবাদযোগ্য বা কর্ষণীয় জমির উপরি-স্তর কর্তন, জমির রেকর্ডীয় মালিকের বিনা অনুমতিতে বালু, মাটি দ্বারা ভরাট এবং অনুরূপ কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এই অপরাধে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। উপজেলাবাসীকে এই আইনের প্রতি দায়িত্বশীল থাকার জন্য বিনীত ভাবে অনুরোধও জানানো হয়।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন- গুরুদাসপুর উপজেলায় তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন একশ্রেণির মানুষের নেশা-পেশায় পরিণত হয়েছে। এসব মাটি খেকোদের হাত থেকে ফসলি জমি রক্ষায় তিনি ব্যপক ভাবে প্রচারের জন্য মাইকিং দিয়েছেন। একইসাথে জরুরী বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছেন। পুকুর খনন বন্ধে তিনি সব ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

স্থানীয়রা জানায়- চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র গুরুদাসপুর উপজেলা। এই উপজেলার কোনো জমিই বাদ যায়নি মাটি খাদকদের হাত থেকে। বিলের এসব তিন ফসলি জমি নির্বিচারে কেটে পুকুর বানানো হয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা, কুমারখালী, চাকলের বিলের যতদূর চোখ যায় একটার পর একটা পুকুর আর পুকুর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন- রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে এবং নেতা-কর্মীদের নাম ভাঙিয়ে একটি সিন্ডিকেট চক্র কৃষকের তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে চলেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিদ্দকুর রহমান পাটোয়ারী পুকুর খনন বন্ধে সোচ্চার হলেও তার আশেপাশের নেতা-কর্মীরাই এই অপরাধের সাথে জড়িত। তাছাড়া পুকুর খননবন্ধে থানা প্রশাসনেরও অসহযোগিতা রয়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন- এভাবে ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করায় মারাত্মক ভাবে ফসল হানি হচ্ছে। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে পুকুর খনন করায় প্রতি বছরই আশঙ্কাজনক হারে কমছে ফসলি জমি। গত ১৩ বছরে গুরুদাসপুর উপজেলায় ফসলি জমি কমেছে ১ হাজার ৫১০ হেক্টর। ২০১১ সালে গুরুদাসপুরে ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৬০৯ হেক্টর। এই জমি চলতি বছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার হেক্টরে।

নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন- গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম উপজেলার পুকুর খনন বন্ধে আমি সব সময় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। পুকুর খননকারীরা কোনো দলের হতে পারেনা। পুকুর খনন বন্ধে তিনি সংসদেও স্বরাষ্ট্র ও ভূমি মন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে