৪’শ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক নিদর্শন তিন গম্বুজ মসজিদ-মঠ
নিজস্ব প্রতিবেদক, আত্রাই : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সাংস্কৃতিক প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাসের পরিণত মেলবন্ধনের মায়ায় কিংবদন্তিতে রুপ নেয় ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো। তেমনি ইতিহাস আর ঐতিহ্য ভরা নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মোঘল আমলের সামন্ত সভ্যতার অনুপম নিদর্শন ইসলামগাঁথী তিন গম্বুজ মসজিদ ও তৎসংলগ্ন একটি মঠ। ৪০০ বছর আগের এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আত্রাই উপজেলার এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আশ্রয়স্থলটি প্রাচীন বিস্ময়ে পরিপূর্ণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাংস্কৃতিক প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধ সবাইকে আকর্ষণ করে তোলে।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে ঐতিহাসিক গুড় নদীর তীরে ইসলামগাঁথী গ্রামটি অবস্থিত। এ গ্রামটি উপজেলার বিশা ইউনিয়নের জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটি বড় গ্রাম।
এ গ্রামে রয়েছে শত শত বছর পূর্বের স্থাপনা কারুকার্যখচিত তিন গুম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ ও তৎসংলগ্ন একটি মঠ। আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মোঘল শাসনামলে নির্মিত এই কীর্তি।
পুরনো এই মসজিদ স্থাপত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। সৃষ্টি আর ধ্বংসে এগিয়ে চলছে পৃথিবী। কেউ সৃষ্টিতে আবার কেউ ধ্বংসের খেলায় মাতিয়ে উঠেছে। আবার কারোর দায়িত্বহীনতার কারণে কালের গহ্বরে সমাহিত হচ্ছে ঐতিহাসিক অতীত সমূহ।
জানা যায়, ওই গ্রাম এক সময় নিভৃত পল্লীর একটি জনবসতি ছিল। এক সময় নৌকার বিকল্প কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। সে সময় আজ থেকে কয়েক শ’ বছর আগে গড়ে উঠে এখানে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। মসজিদ সংলগ্ন প্রায় ৪০ ফুট উচু স্তরের একটি মঠও নির্মাণ করা হয়। মঠটিতে খোদাই করে অঙ্কন করা হয় বিভিন্ন প্রাণীর ছবি।
এক সময় এ মঠ এলাকাবাসীর কল্যাণের জন্য বিশ্বকর্মার পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ধারণা করে তাতে বিভিন্ন ধরণের মান্নত মানা হতো। প্রতি বছর মহরম মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরার দিনে দূর-দূরান্ত থেকে কাশিদরা এসে এখানে আর্চনা করত। যুগের পরিবর্তনে এসব কু-প্রথা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন আর সারা বছরেও দেখা মিলে না কোন মান্নত সামগ্রীর বা কাশিদ দলের।
এদিকে এ মসজিদ ও মঠ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা এলাকার কেউই সঠিকভাবে বলতে পারেন না। শত শত বছর থেকে এটি রয়েছে তাঁরা শুধু এতটুকুই বলতে পারেন।
ওই গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরাতো দূরের কথা আমাদের বাপ-দাদারাও বলতে পারেননি এটি কত সালে বা কবে স্থাপিত হয়েছে।
ওই গ্রামের অধিবাসী আত্রাই কলকাকলী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদুর রহমান বলেন, আমার দাদা ১৯৮০ সালে ১০৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনিও বলতে পারেননি এ মসজিদ ও মঠ কোন সময়টিতে স্থাপিত হয়েছে। এ দু’টি স্থাপনা সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
তবে ইতিহাস পর্যালোচনায় যতদূর জানা যায়, ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মোঘল শাসনামলে ইসলাম খাঁ নামের কোন এক ব্যক্তি এ এলাকার শাসনকার্যে নিয়োজিত ছিলেন। ইসলামগাঁথী, ইসলামপুরসহ এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি গ্রাম তাঁর নামানুসারেই করা হয়েছে। ধারণা করা হয় তাঁর আমলেই এ মসজিদ ও মঠটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এসএ ও আরএস খতিয়ান মূলে ৬ শতক জমির উপর কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এ দু’টি স্থাপনা। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মঠটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলতে বসেছে। ইতোমধ্যেই মঠের ক্ষোদাইকৃত অনেক প্রাণীর ছবি মুছে ফেলা হয়েছে।
এছাড়াও মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য এটি ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন মহল্লার একটি পক্ষ। আরেক পক্ষ মঠ না ভেঙ্গে তা দর্শনীয় হিসেবে রেখে দিয়ে মসজিদ স্থানান্তর করার পক্ষে। এদিকে এ মঠ বা মসজিদ না ভেঙ্গে এগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে অনেক দর্শনার্থী এখানে আসবেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
যেহেতু ইসলামে মসজিদ স্থানান্তরের বিধান রয়েছে। তাই প্রয়োজনে এ মসজিদ ও মঠটি অক্ষত রেখে অন্যত্র নতুন করে মসজিদ নির্মাণপূর্বক এ দু’টি স্থাপনার আরও সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।