ভাঙনের মুখে স্বামীর কবরের পাশে সারারাত স্ত্রী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১; সময়: ৭:০৬ অপরাহ্ণ |
ভাঙনের মুখে স্বামীর কবরের পাশে সারারাত স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম : দীর্ঘ দুই মাস ধরে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার শত শত পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনে নদী গর্ভে চলে গেছে শত শত বাড়ি ঘর, ভিটেমাটি, ফসলি জমি, স্কুল, মসজিদ, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক সহ স্পার। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে অসংখ্য কবর। তিস্তার অাগ্রাসী ভাঙনের মুখে রয়েছে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মৌজার বগুড়া পাড়া এলাকার গৃহবধূ বিবিজনের স্বামী সাবেদ অালীর কবরও। যে কোন মুহূর্তে কবরটি হতে পারে নদী গর্ভে বিলীন।

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মৌজার বগুড়া পাড়া এলাকার তিস্তার ভাঙনের মুখে থাকা মৃত সাবেদ আলীর কবরের পাশে তার স্ত্রী পুরো রাত বসে থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনেন। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে এতথ্য জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম।

ইউপি সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, দুই মাসেরও বেশী সময় ধরে তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়েছে শত শত পরিবারের বসত ভিটা সহ বাড়ী ঘর। ভাঙন অব্যাহত থাকায় শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে গতিয়াসাম মৌজার বগুড়া পাড়া এলাকার মৃত সাবেদ আলীর কবরটি পড়ে ভাঙনের মুখে। এতে করে তার স্ত্রী বিবিজন রাত পুরো রাত কবরের পাশে থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনেন। এসময় তিনি অনেক আহাজারী করেন। স্থানীয়রা নানাভাবে চেষ্টা চালান কবরটি রক্ষার জন্য। স্বামীর শেষ চিহ্ন টুকু হারানোর আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে স্ত্রী বিবিজন রাত দিন তাকিয়ে থাকছেন ভাঙনের মুখে থাকা প্রিয়জনের কবরটির দিকে।

ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দুই মাস ধরে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে কোন কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। অথচ পাউবোর নেই তেমন কোন উদ্যোগ। ভাঙন ঠেকাতে সরকারের নেই কার্যকরী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, অসংখ্য কবর নদী গর্ভে চলে গেছে। না জানি কখন যেন ওই বিবিজনের স্বামীর কবরও নদী গর্ভে যায়।

উল্লেখ্য, দুই মাসেরও বেশী সময় ধরে চলমান তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের শত শত পরিবারের বাড়ী ঘর সহ বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। তীব্র ভাঙনের শিকার হয়ে তিনটি ইউনিয়নের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ভেঙে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত নদী গর্ভে চলে গেছে এসব এলাকায় থাকা পাঁচটি মসজিদ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সেতু, পাঁচটি কালভার্ট, বাঁধ, এক কিলোমিটার পাকা সড়ক সহ দুটি স্পার। ভাঙনে তিস্তার পেটে গেছে অন্তত একশ বিঘা জমির রোপা আমন সহ সবজি ক্ষেত।

হুমকির মুখে রয়েছে তিন ইউনিয়নের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কয়েকটি মসজিদ, একটি গুচ্ছ গ্রাম, এক কিলোমিটার পাকা সড়ক সহ শত শত পরিবারের বসতভিটা। ভাঙনের শিকার হওয়া এসব এলাকার মানুষজন তাদের বাড়ি ঘরের টিনের চাল, টিনের বেড়া সহ পাকা ভবন ভেঙ্গে ভবনের ইট গুলি রেখেছেন বিভিন্ন রাস্তার ধারে। অধিকাংশ পরিবার তাদের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের আত্মীয় স্বজন কিংবা দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়ীতে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে