সায়ানাইড
প্রিয় সায়ন, কোনো একদিনের প্রথম ট্রেনেই তুমি এই শহর ছেড়েছিলে। তারপর তোমার আর আমার দেখা হয়নি। হয়নি কোনো কথা। কোথায় আছো, কেমন আছো? আর কোনো খবর পাইনি তোমার। আমিও তোমাকে আর কখনো খোঁজার চেষ্টা করিনি। লিখিনি কোনো চিঠি।
লিখবোই বা কোথায়, কোন ঠিকানায়? কয়েক বছর পার হয়ে গেছে। এর মাঝে বদলিয়েছে অনেক কিছু। তোমার অপেক্ষায় আছি বললে ভুল হবে। আর মিছে তোমার জন্য অপেক্ষার করার কোনো মানে হয় না। আগের মত বোকা আমি আর নেই। যে তোমার জন্য মিছে অপেক্ষার প্রহর গুণবো। তুমিও যে অপেক্ষার প্রহর শেষ করে ফিরে আসবে এমন মানুষ নও।
মাঝে মাঝে তোমাকে আমার মানুষ বলতে খুব কষ্ট হয়। পশুপাখির সাথে তুলনা করতেও ভীষণ কষ্ট হয়। কারণ তারাও ভালোবাসায় পোষ মানে। আর তুমি…
তোমাকে অমানুষ বললে হয়তো ঠিক হবে। ভালোবেসে তোমাকে আমি পাইনি তাই এমন ঘৃণা তোমার উপরে এমন ভাবার প্রয়োজন নেই। কারণ তোমাকে পাবার আশা করিনি। তোমাকে ভালোবাসাটা ভুল ছিলো। ভুল ছিলো বলেই তো সেইদিন ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছিলাম।
তুমি কখনো কল্পনাও করতে পারোনি তোমার সাথে এমনটা হবে। নিজেকে খুব বড় খেলোয়াড় মনে করতে তুমি। তবে তুমিও ভুলে গেছিলে বাবারও বাবা আছে।
মাঝে মাঝে তোমার জন্য আমার ভীষণ মায়া লাগে। এত বড় খেলোয়াড় হয়েও আমার কাছে তোমাকে হেরে যেতে হলো।
না আমি কিছুই করিনি শুধু মাত্র তোমার প্রিয় বইটায় কয়েক ফোটা সায়ানাইড দিয়েছিলাম। খাবার শেষ করে ঘুমোতে যাবার আগে তুমি খুব মন দিয়ে বই পড়তে শুরু করলে। প্রথম পাতা পড়ার পর দ্বিতীয় পাতাটা উল্টানোর পরেই তুমি চোখ বুঝলে। যা আর কখনো খুলোনি। কি সহজ করে তোমাকে আমি পৌঁছে দিলাম পরপারে।
অথচ আমি চেয়েছিলাম তোমার মৃত্যুটা যন্ত্রণার হোক। কিন্তু ল্যাবে যাবার পর এটাই সব থেকে ভালো উপায় বলে মনে হয়েছিলো আমার।
কেউ টেরই পেলো না। তুমি মুহূর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলে আর আমি তোমার নিথর দেহটা তোমারই ঘুরতে যাবার সব থেকে বড় লাগেজটাই ঢুকিয়ে দিলাম।
খুব ভোরের এক্সপ্রেস ট্রেনে তুলে দিলাম। ব্যাস, আমার কাজ শেষ। তারপর অবশ্য আর জানা হয়নি তোমার লাশের কি হয়েছিলো। আজ হঠাৎ তোমার কথা মনে হলো। মনে হবার কারণ আছে নিশ্চয়। কারণটা শুনবে না?
আজ আমার বিয়ে। হ্যাঁ, আজ আমার বিয়ে। আমি এখন লাল টুকটুকে বেনারসি পরে বউ সেজে এই সব লিখছি। লেখা শেষ হলে ডায়েরিটা পুরিয়ে ফেলবো। কারণ আজ তোমার চ্যাপ্টার ক্লোজ। আমার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনায় তোমাকে আমি রাখবো না। পরপারে ভালো থেকো।
ইতি
‘তোমার সামিরন’
লেখা:
সবনাজ মোস্তারী স্মৃতি,
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী