পরের জন্মে তোমার হবো
মালোবিকা কোথায় তুই? মালোবিকা!
দাদা কিছু বলবি?
‘হ্যাঁ রে শোন বাংলাদেশ থেকে আমার এক বন্ধু এসেছে। আমাকে একটা ঘর খুঁজে দিতে বলল, আমি আবার বললাম বাইরে ঘর খুঁজতে যাবি কেনো অসুবিধা না হলে আমাদের বাড়ির চিলেকোঠার ঘরটা ফাঁকা আছে চাইলে থাকতে পারিস। ‘
‘ভালো করেছিস দাদা। বাড়িতে তো তুই আমি আর সদ্দার কাকা ছাড়া কেউ থাকে না। এত বড় বাড়ি পুরো খালি পড়ে থাকে। ‘
তোর বন্ধু কখন আসবে?
এই আসলো বলে, আমি তো থাকবো না। একটা মিটিং আছে। তুই একটু চা নাস্তা দিয়ে আলাপ করিস আর কিছু লাগলে সাহায্য করিস। সদ্দার কাকাকে যদিও আমি সব বলে রেখেছি। তবে সদ্দার কাকাকে এখন কিছু বলা আর না বলা সমান।
আচ্ছা দাদা তুই চিন্তা করিস না। আমি সামলে নিবো।
ওকে দ্যাটস লাইক এ্যা গুড গার্ল। এই না হলো আমার বোন।
সুদ্বীপ চলে যায়। মালোবিকা রান্না ঘরে গিয়ে চুলোতে চায়ের পানি তুলে দেয়।
বাড়িতে রান্না ঘরে তেমন ঢুকা হয় না মালোবিকার। শুধুমাত্র যেদিন যেদিন কাজের মেয়েটা আসে না সেদিন ছাড়া।
চায়ের পানি তুলে দিয়ে মালোবিকা জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। সুন্দর গোধূলির আকাশ। এমন আকাশ দেখে মালোবিকার ঘরে থাকতে মন চাই না। মন চাই গঙ্গার ধারে গিয়ে বসে থাকতে।
কলিং বেল বেজে উঠে। সদ্দার কাকা কে এসেছে একটু দেখো।
রান্না ঘরে এসে সদ্দার জানিয়ে যায় দাদাবাবুর বন্ধু এসেছে।
মালোবিকা চা এবং বেগুনী নিয়ে উপরে যায়।
দরজায় ঢুকতে ঢুকতেই বলে, ‘আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো? দাদা আপনার কথা বলে গেছে। কোনো অসুবিধা হলে জানাবেন আর কিছু লাগলেও।
সদ্দার কাকার বয়স হয়েছে, আমি আমাদের মালির ছেলেটাকে ডেকে পাঠিয়েছি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। আসলে এত বড় বাড়িতে আমি, দাদা আর সদ্দার কাকা ছাড়া কেউ থাকি না তো তাই ঘরটা সেভাবে পরিষ্কার করাও হয় না খুব প্রয়োজন না পড়লে। আপনি চাইলে ছাদে অথবা নিচে গিয়ে বসতে পারেন।’
প্রবীর জানালা থেকে মুখ সরিয়ে মালোবিকার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
প্রবীর তুমি!
ভূত দেখার মত মালোবিকা চমকে উঠে, প্রবীরের মুখে মিষ্টি হাসি।
‘কি ভেবেছিলে তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াবে আর আমিও তোমাকে পালাতে দিবো? তাতো কখনো হবে না।তাই তো নতুন প্রজেক্টের বাহানায় সোজা বাংলাদেশ থেকে কলকাতা। আর কলকাতার অন্য জায়গায় না উঠে সরাসরি তোমার বাড়ির চিলেকোঠায়।’
উপস্ সরি হবু শ্বশুড় বাড়ির চিলেকোঠায়।’
মালোবিকার মুখ মলিন হয়ে উঠে।
প্রবীর তুমি এটা ঠিক করোনি। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হয় না, বিয়ে তো দূরের কথা। ‘
কেনো মালোবিকা? সমস্যা কোথায়? তুমি আমাকে ভালোবাসো আমিও ভালোবাসি। আর তুমি আমাকে কিছু না জানিয়ে হুট করে কেনো কলকাতায় চলে এলে? তোমাকে খুঁজে বের করতে আমার পাঁচ বছর সময় লেগে গেলো। ‘
‘আমি তো তোমাকে বলিনি প্রবীর আমাকে তুমি খুঁজে বের করো। তুমি এখান থেকে চলে যাও।’
‘একবার যখন এসে পড়েছি তখন তো আমি যাচ্ছি না মালোবিকা।’
মালোবিকা কিছু বলে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মালির ছেলেটা এসে পড়ে। দিদি আমাকে ডেকেছিলেন!
মালোবিকা কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে ঘরটা পরিষ্কার করে দাও। আজ থেকে ইনি থাকবেন এখানে। আমি নিচে যাচ্ছি। আর কোনো দরকার হলে তুমি একটু দেখো।
‘ আচ্ছা দিদি, কোনো সমস্যা হবে না।’
মালোবিকা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আলমারির ভেতর থেকে কিছু ফাইল বের করে। সেগুলো দেখে আর বিড়বিড় করে বলে সবকিছু এমন হয়ে গেলো কেনো?
জানালার পাশে রাখা টবের গাছটা আধমরা হয়ে গেছে। দুদিন বাদে মরেই হয়তো যাবে। মালোবিকা গাছটার বেশ যত্ন করতো তবুও একটু একটু করে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। যেন ভীষণ কঠিন রোগ করেছে গাছটার।
অনেক রাত করেই সুদ্বীপ বাড়ি ফিরে। মালোবিকাকে দেখতে না পেয়ে তার ঘরে গিয়ে দেখে সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। সুদ্বীপ জিজ্ঞেস করে কিরে রাতে নাকি তুই খাস নি সদ্দার কাকা বললেন। শরীর ঠিক আছেতো?
হ্যাঁ দাদা ঠিক আছে, খেতে ইচ্ছে করছে না তাই খাইনি।
প্রবীর খেয়েছে?
খেয়েছে আমি সদ্দার কাকার হাতে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছি। দাদা তুই এখন ঘরে যা আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
সুদ্বীপ চলে যায়।
মালোবিকা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে ইউনিভার্সিটির কথা। যেখানে প্রবীরের সাথে তার আলাপ হয়। আর আলাপ থেকে কি ভাবে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পরে দুজন। তবে প্রবীর মুসলিম আর মালোবিকা হিন্দু ধর্মের।
তারপরেও দুজন দু বাংলার মানুষ একজন বাংলাদেশ একজন কলকাতা। প্রবীরের পরিবার কোনো সমস্যা না করলেও মালোবিকার পরিবার কখনো এই সম্পর্ক মেনে নিতো না।
তাই আর জটিলতা না বাড়িয়ে প্রবীরকে না জানিয়েই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছিলো সে। এত বছর পর প্রবীর যে তার খোঁজে আসবে সে তা কল্পনাও করেনি। তবে প্রবীরের জীবনে আর কেউ না আসলেও তার জীবনে যে নতুন এক পুরুষ এসেছিলো।
যার সাথে পারিবারিক ভাবে তার বিয়ে হয়েছিলো। তবে সে বিয়ে টিকেনি। বিয়ের ছ’মাসের মাথায় হঠাৎ নীললোহিত বেঁকে বসলো। সে নাকি মালোবিকার সাথে সংসার করতে চাই না। তার জীবনেও এসেছিলো বিন্তি নামের নতুন নারী।
মালোবিকা শ্বশুড় বাড়ি থেকে ফিরে আসে এক কাপড়ে। তার কিছু পরেই নীললোহিত আর মালবিকার ডিভোর্স হয়ে যায়।
যে প্রবীর তাকে ভালো বেসে এত বছর পর এত দূরে এসেছে সে প্রবীরের সামনে মালোবিকা কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবে?
প্রবীর যখন সব কিছু জানবে তখন কি মালবিকাকে সে মেনে নিবে?
হয়তো না। মালোবিকার গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে।
সকালে সদ্দার কাকা মালোবিকার ঘরে চা নিয়ে যায়। দরজা ধাক্কায়। কিন্তু সে দরজা খোলে না। একটা পর্যায়ে সুদ্বীপ, প্রবীর এসে ডাকে দজড়া খোলে না।
একপর্যায়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলে দেখে একটা বেনারসি গলায় পেঁচিয়ে মালোবিকা সিলিং এর সাথে ঝুলে আছে।
বিছানার উপরে একটা কাগজে লেখা রয়েছে-
‘ দাদা আমাকে ক্ষমা করিস। ‘
চিঠির অপর পাশে লেখা,
‘ প্রবীর এ জনমে তোমার হতে না পারলেও পরের জন্মে তোমার হবো মিলিয়ে নিও।’
লেখা:
সবনাজ মোস্তারী স্মৃতি
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী