রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউতে শয্যা নেই

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২১; সময়: ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ |
রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউতে শয্যা নেই

তারেক মাহমুদ : রাজশাহীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনা ও করোনা উপসর্গের রোগী। ফলে চাপ বাড়ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৫ জন, রাজশাহীর ১৩ জন, নওগাঁর ৩ জন ও নাটোরের ১ জন। এ নিয়ে শুক্রবার (৪ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলো ২২৫ জন এবং করোনা ও উপসর্গে মারা গেছেন ১৬ জন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, করোনা ইউনিটের ৮ টি ওয়ার্ডের মোট বিছানা রয়েছে ২৩২ টি। এর মধ্যে শুক্রবার সকাল ১০ টার মধ্যেই ২২৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের ভেতরে ও বারান্দার ফ্লোরে শয্যা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগি। তবে বারান্দায় কিছু নতুন শয্যা যুক্ত করা হচ্ছে। তবুও জায়গা মিলছে না। শুক্রবার বিকেলে ৮ টি ওয়ার্ডের সব শয্যায় রোগিতে পূর্ণ হয়ে যায়। আইসিইউতেও কোনো শয্যা ফাঁকা নেই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, যাঁদের অক্সিজেন স্যাচুুরেশন কম, অবস্থা খারাপ, তাঁদেরকেই এখন হাসপাতালে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। অল্প সমস্যা নিয়ে আসা রোগিদের চিকিৎসা দিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। শনিবার (৫ জুন) হাসপাতালের এক নম্বর ওয়ার্ডটি করোনা রোগিদের জন্য নতুন করে করা হচ্ছে। এই ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে এখন করোনার জন্য মোট ৯ টি ওয়ার্ড যুক্ত হচ্ছে। এক নম্বর ওয়ার্ডে নতুন করে মোট ৩২ টি শয্যা ও ২৮ টি অক্সিজেন সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। সঙ্কটে আছে অক্রিজেন সাথে অন্য রোগীদের সেবা নেওয়ার হার একটু কমেছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগি ছিলো ৯শো জন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গরমে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এ সময় জেনারেটর চালিয়ে আইসিইউসহ করোনা রোগিদের সেবা দেয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এ সময় হাইফ্লোন্যাজাল ক্যনোলা লাগানো রোগিদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে মহামারিকালে বিদ্যুৎ যাতে না যায়- সে বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলেও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে হাসপাতালে আইসিইউ থেকে মৃত্যু বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টা থেকে ৪ পর্যন্ত হাসপাতালের আইসিইউতে বেশ কয়েকবার স্বজনদের কান্নার চিৎকারের শোনা যায়। এসময় কথা হয় স্বজনদের সাথে। তারা জানান, ওই একঘণ্টায় দুই রোগি মারা যাওয়ায় স্বজনরা কাঁদছিলেন। কয়েক দিন থেকে হাসপাতালে দুইটি আইসিইউ বেড বাড়ানো হলেও তা ফাঁকা থাকছে না। ফাঁকা হওয়া মাত্রই দুই-এক ঘণ্টার মধ্যেই আবারো পূরণ হয়ে যাচ্ছে। এখন করোনা ওয়ার্ডের শয্যা ও আইসিইউ নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ। তারা জানাচ্ছেন, সব কিছু বাড়ানো হচ্ছে তবুও সংকুলান করা যাচ্ছে না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ জন রোগীর মৃত্যুতে চিন্তিত খোদ চিকিৎসকরাও। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউতে তারা মারা যান বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। একদিনে করোনায় এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যু বলে জানান তিনি। বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৬ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে ১০ জনই করোনা পজিটিভ।

আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৬ জন। মৃতদের মধ্যে আইসিইউতে পাঁচজন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে দুইজন, তিন নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে দুইজন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন মারা গেছে। মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়জন, রাজশাহীর ছয়জন, নওগাঁ জেলার একজন। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড গুলোতে ভর্তি আছে ২২৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগি ভর্তি হয়েছে ৩২ জন- যাদের মধ্যে ১৩ জন রাজশাহীর, ১৫ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, পাবনার তিনজন ও একজন নাটোর জেলার বাসিন্দা।

২৪ মে থেকে শুক্রবার ( ৪ জুন) পর্যন্ত ১২ দিনে হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসিউতে মারা গেলেন ৯৩ জন। এই ৯৩ জনের মধ্যে ৫৬ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর আরও ১৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ল্যাবে ৫২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮২, রাজশাহীর ২৮৪ জনের নমুনার মধ্যে ৭৪ এবং নাটোরের ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩২ জনের দেহে করোনা পাওয়া গেছে।

হাসপাতাল পরিচালক জানান, রোগি বাড়ায় আরও একটি ওয়ার্ড যুক্ত করা হচ্ছে। আর বাড়ানো হচ্ছে শয্যা। করোনার সকল ওয়ার্ডের পাশে বারান্দায় কিছু বেড যুক্ত করেছি। চিকিৎসক ও দায়িত্বদের নিয়ে কাজের বিষয়ে নানান পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

  • 910
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে