গোদাগাড়ীতে এমপির নামে শিক্ষকের নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩; সময়: ২:২৭ অপরাহ্ণ |
গোদাগাড়ীতে এমপির নামে শিক্ষকের নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হুজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনিটি পদে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অংকের নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

এই নিয়োগ বাণিজ্যে মূল হোতা হচ্ছেন ওই স্কুলের সহকারী ধর্মীয় শিক্ষক, উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মীয় বিষয়ক সম্পাদক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য মাও. আবুল কালাম আজাদ। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমানকে বগলের তলে রেখেই প্রার্থীদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠে মাও. আবুল কালাম আজাদ।

প্রায় সপ্তাহ খানেক পূর্ব থেকে এই নিয়োগ নিয়ে চলছে নানান সমালোচনা। এলাকাবাসী বলছেন, এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে আবুল কালাম আজাদ নিরাপত্তা প্রহরী, আয়া ও পরিচ্ছনাকর্মী পদে প্রার্থীদের নিকট থেকে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবে ওই শিক্ষক আদৌতে এমপিকে টাকা দিবে কিনা তা সন্দেহ। এমপি এসব বিষয়ে জড়িত থাকেন না বলে আমরা জানি।

তবে এই বিষয়টি নিয়ে এলাকায় এমপিকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য হচ্ছে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইমেজ সংকটে পরবেন। শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ নিজের ফায়দা লুটতে এসব কাজে জড়িত হয়েছে। সে স্কুলে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটায়। এই নিয়োগ সম্পর্কে এমপি সবকিছু অবগত বলে নিজেকে জাহির করেন।

২২ জুন তিনটি পদে নিয়োগে গোপনে মোটা অংকের টাকা নেওয়া হচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাহার আলী গত ২০ জন স্কুলের প্যাডে জরুরী নোটিশ জারি করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনিবার্য করণ দেখিয়ে পরীক্ষা স্থগীত করে। ধর্মীয় শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের একক দাপট ও টাকা নিয়ে নিয়োগ বিষয়টি নিয়ে স্কুলের শিক্ষকরা বিভক্ত হয়ে পড়ে।

পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ জারি করার পর আবুল কালাম আজাদ নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যেকোন মূল্যে নিয়োগ প্রক্রীয়া সম্পন্ন করা হবে বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। পরে গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দুলাল আলমকে লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাহার আলীকে নিজের অফিসে ডেকে চাকরীচুত্য কারা হুমকি দেন।

নাম গোপন রাখা শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষা অফিসার দুলাল আলম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে তার অফিসে ডেকে আবুল কালাম আজাদের উপস্থিতিতে বলেন, এই নিয়োগ নিয়ে বেশী ঝামেলায় জাড়ায়েন না। স্থানীয় এমপি আমাকে নির্দেশ দিলে আপনার চাকরী থাকবে না, এক্ষেত্রে আমি আপনার জন্য কোন কিছু করতে পারবো না। শিক্ষা অফিসার দুলাল আলম নিজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে প্রস্তাব দেয় কিছু টাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগবন্টন করে নিয়ে ২২ জুন নিয়োগ প্রক্রীয়া সম্পন্ন করতে।

হুজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২১ জুন নিয়োগ সংক্রান্ত জরুরী মিটিংয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪ লাখ টাকা রেখে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি ফাইনাল হয়।

সেই মোতাবেক পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীদের ঠিক রেখে নামমাত্র গত ২২জুন স্কুলে তিনটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ৭জন , আয়া পদে ৩ ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে ৩ জন অংশ গ্রহণ করে। এতে নিরাপত্তা প্রহরী পদে বাউটিয়া গ্রামের জাহিদ আলী, আয়া পদে পাতিয়াপুকুর এলাকার আন্না সরেন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে হুজরাপুর গ্রামের সাদিকুল মেম্বারের ছেলে সেলিম রেজাকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, তিনিটি পদে ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য সাদিকুল ইসলামের কাছে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাকি ২৪ লাখ টাকা অপর দুই প্রার্থীর নিকট থেকে নেওয়া হয়েছে।

এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যে আবুল কালাম আজাদ নিজেকে জড়িয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় অব্যাহত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আবুল কালাম আজাদের শাস্তি দাবি করে সমালোচনা চলছে।

এসব বিষয়ে শিক্ষক মাও. আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সম্পন্ন মিথ্যা। কে কি বললো তাতে কোন কিছু যায় আসে না।

নিয়োগের বিষয়ে এমপি জানে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এই নিয়োগ বিষয়ে এমপি মহোদয় কিছুই জানেন না। নিয়োগ পরীক্ষা স্থগীতের নোটিজ বিষয়ে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এভাবে স্থগিত করতে পারেন না। তার প্রক্রীয়াটি ছিলো সম্পন্ন অবৈধ এটি সে বুঝতে পেরে ভুল স্বীকার করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা হয়ে গেছে বলে জানান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা আফিসার দুলাল আলমের সাথে গত দুইদিন থেকে মোবাইলে ফোনদিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসএমএস করা হলেও নিশ্চুপ থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মেসেঞ্জারে ঘুষ নেওয়া ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে চাকরীচুত্যু করার হুমকি বিষয়ে জানতে চেয়ে মেসেজ দিলে সিন করার পরও নিশ্চুপ থাকেন।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপত মতিউর রহমান বলেন, টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে অনেক কথায় বলতে পারে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে