‘দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর পর ন্যায় বিচার পেলাম’

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৩; সময়: ২:০৩ পূর্বাহ্ণ |
‘দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর পর ন্যায় বিচার পেলাম’

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ‘ন্যায় বিচার পেলাম। আইন আইনের গতিতে চলেছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। আমরা বিচার পেলাম দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর পরে। এই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড মনে করিয়ে দেয় ১৯৭১ সালের বুদ্ধিজীবী নিধনে পাক হানাদার বাহিনীর কথা। আমরা বাবাকে ফেরত পাব না। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর আমি ও আমার ভাই বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারিনি। বাবাকে বাবা বলে জড়িয়ে ধরতে পারিনি। এ নিদারুণ কষ্ট আমরা জানি।’

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টা ১মিনিটে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। পরে অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা তাব্বাসুম আহমেদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সেগুফতা তাব্বাসুম আহমেদ বলেন, ‘আমি এই কেসের (মামলা) আইনজীবী না। এই কেসের (মামলার) আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষ। আমি ‘ল’ এর স্টুডেন্ট (ছাত্রী) ছিলাম। ২০০৬ সালে যখন এ ঘটনা ঘটে। তখন আমি একটা ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষ, প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলাম। আমার ইচ্ছা অন্য রকম ছিল। যখন এটা (হত্যাকাণ্ড) ঘটল, তখন আমার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাকে আইনজীবী হওয়া দরকার। কোর্টে যারা থাকে আইনজীবী তাদের সংস্পর্শে আসতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেসটা (মামলাটা) তো আলটিমেটলি রাজশাহী থেকে ঢাকা হাইকোর্টে আসবে। তার আগে তো আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। তারপরে আমার পরিবার বুঝতে পারে আইন পেশায় আমি যুক্ত হলে কেসটা (মামলাটা) আরও ত্বরান্বিত হবে। তাই কোর্টে প্র্যাকটিস করার সিদ্ধান্ত নেয় আমার পরিবার। আমাদের বিচার পেতেই হবে, এ বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর ছিলাম। প্রথম দিন বা যে মুহূর্তে শুনেছি তখন থেকে আমার মাথার মধ্যে চলে আসে এটার বিচার হতে হবে। সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত হতে হবে।’

আপনার অন্য কোনো পেশায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সেগুফতা তাব্বাসুম আহমেদ বলেন, ‘না- আমি আইনের ছাত্রী ছিলাম। আইনের ছাত্রী হয়ে আমাকে কোর্টের বারান্দায় দৌড়াতে হলো। আমি চাইলে ইউএনডিপির ইন্টারন্যাশনাল কোনো অর্গানাইজেশনে শিক্ষকতায় যেতে পারতাম। বিভিন্ন দেশে ঘুরতে পারতাম। এই ধরনের ইচ্ছে ছিল। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আইনগত বিশ্লেষণে কাজ করতে পারতাম। কত কিছু করা যেত। কোর্টে গিয়ে আইনজীবী হতে হবে কেন?’

তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পরে বাবা হত্যার ন্যায় বিচার পেলাম। বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ বিভাগ স্বাধীন। বিশেষ করে আইনজীবী, পুলিশ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তারা অনেক খরব প্রচার করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।

পরে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দুজন হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুল।

রিভিউ খারিজের আদেশ কারাগারে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আসামিরা। সেই প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়ে যায়। নাকচের সেই চিঠি গত ৬ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। জেল কোড অনুযায়ী চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকরের নিয়ম রয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে