অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত রাজশাহী বিএনপি এখনো অগোছালো
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার হটানোর একদফা দাবিতে এবার চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে সেই আন্দোলন। এরই মধ্যে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতির মধ্যেও অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত রাজশাহী বিএনপি এখনো অগোছালো। একই অবস্থা দলটির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনগুলোতেও। মঞ্চে ওঠা এবং সামনে পিছনে দাঁড়ানো নিয়েও মারামারি করেন তারা।
জেলা আহ্বায়ক প্রায় চার মাস ধরে কারাগারে। ২০১৯ সালের ৫ জুলাই তিন মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও ইতোমধ্যেই চার বছর পার হয়ে গেছে। এ নিয়ে জেলার নেতাদের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তস। জেলার আহ্বায়কের মত গুরুত্ব পূর্ন এই পদে শুরু থেকেই আবু সাঈদ চাঁদকে মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। এছাড়াও কতার বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কথাবার্তা ও কর্মকান্ড নিয়ে বিব্রত দলের সিনিয়র নেতা। ফলে জেলার নেতারা পৃথকভাবে পালন করে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি।
অপরদিকে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে মহানগরের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছিল। নিজেদের মধ্যে মারামারি, নতুন কমিটির সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছিল। তার পর থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করা হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (মিনু), সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, শফিকুল হক মিলন, নাদিম মোস্তাফা এবং তোফাজ্জাল হোসেন তপুর একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল। তাঁদের মতামত উপেক্ষা করে আনকোরা নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। উঠতি নেতাদেরও কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে।
দলের একজন নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে যাঁরা বিএনপির সামনের সারির মুখ, তাঁদের বাদ দিয়ে নিজেদের ঘনিষ্ঠ অরাজনৈতিক লোকদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। তারা নেতাদের এক যায়গায় আনতে পারেনি। ফলে দলের বিশৃংখলা থেকে গেছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে কমিটির নেতাদেরই জিজ্ঞেস করেন।
তবে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, ‘সব মীমাংসা হয়ে গেছে। তাই তো একসঙ্গে চলছি।’
জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে চার বছর। জেলার ২৩টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে মাত্র পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে ৭টির। জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ কারাগারে। জেলা বিএনপি বিপর্যস্ত।
২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। এরপর কমিটির সদস্য সচিব মামুন-অর-রশীদ কেন্দ্র থেকে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করিয়ে আনেন। এরপর বিরোধ আরও তুঙ্গে ওঠে।
গত বছরের ৬ জুন সদস্য সচিবকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে আবেদন করা হয়। আবেদনপত্রে কমিটির আহ্বায়ক ইরশাদ আলী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, ওয়ালিউল হক, আসলাম সরকার, বজলুল হক ও জয়নাল আবেদীন স্বাক্ষর করেন।
দলীয় সূত্র জানায়, এই বিরোধের কথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও কলের মাধ্যমে শুনেছেন। তিনি সবাইকে মিলেমিশে চলতে বলেন।
মামুন-অর-রশিদ বলেন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। সবাই সহযোগিতা করছেন। দলে কোনো সংকট নেই। সবাই এক সঙ্গে আছি এবং থাকবো। সরকার পতনের আন্দোলনেও এক সঙ্গে মাঠে আছি এবং থাকবো।