মা কাছিমের দেহে ট্যাগিং, যা বললেন গবেষকরা!
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কক্সবাজার উপকূলে গবেষণার উদ্দেশ্যে সামুদ্রিক মা কাছিমের দেহে ট্যাগিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ডিম পাড়তে আসা অলিভ রিডেল প্রজাতির দুটি মা কাছিমকে ট্যাগিং করে তা সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গবেষণার কাজে ট্যাগিংয়ের পাশাপাশি মা কাছিম রক্ষায় ট্রাঙ্কিং কার্যক্রম করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট।
জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের ছেপটখালী। যেখানে সোমবার ভোরে ডিম পাড়তে আসে বিশাল আকৃতির দুটি মা কাছিম। একটি কাছিম ডিম পাড়ে ১৩০টি আর অপর কাছিমটি ১২২টি। পরে কাছিম দুটিকে সংরক্ষণ করা হয় সমুদ্র পাড়ের কাছিম সংরক্ষণ হ্যাচারিতে। উদ্দেশ্য কুকুরের কাছ থেকে কাছিমকে রক্ষা আর গবেষণায় সংযুক্ত করা।
কাছিম সংরক্ষণ হ্যাচারিতে কাজ করা উখিয়ার ছেপটখালীর মোহাম্মদ শফি উল্লাহ বলেন, উপকূলে ডিম পাড়তে আসে বিশাল আকৃতির দুটি মা কাছিম। একটি কাছিম ডিম দেয় ১৩০টি, আরেকটি কাছিম ডিম দেয় ১২২টি। ডিমগুলো হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। গত ৩ মাসে ৫ হাজারের বেশি কাছিমের ডিম হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
হ্যাচারিতে কাজ করা দীল মোহাম্মদ বলেন, ডিম দিয়ে কাছিমগুলো সাগরে ফিরছিল। কিন্তু কুকুর তাদের আক্রমণ করে বসে। পরবর্তীতে কাছিমগুলো কুকুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে হ্যাচারি এনে রাখা হয়। দুপুরে কাছিম দুটি নিয়ে যাওয়া হয় মাদারবনিয়া সমুদ্র উপকূলে। আর শুরু হয় কাছিমের দেহে ট্যাগিং করা। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গবেষণা কাজ আরও সহজ হবে বলে জানান গবেষকরা।
কাছিম ট্যাগিংয়ে কারিগরি সহায়তাকারী গাজীপুর ভাউয়াল জাতীয় উদ্যান বাটাগুর বাসকা সংরক্ষণ প্রকল্পের স্টেশন ম্যানেজার গবেষক এ জি জে মোরশেদ বলেন, ‘ট্যাগিং মূলত গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মা কাছিম দুটির আগে কোনো ট্যাগিং হয়নি। এই প্রথম মা কাছিম দুটিকে ট্যাগিং করা হয়েছে। এখন ট্যাগিং করার মাধ্যমে দুটি কাছিম রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। ট্যাগিংয়ের পর কাছিম সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী বছর মা কাছিম যখন ডিম পাড়তে উপকূলে আসবে তখন এগুলো ধরা হবে এবং চেক করা হবে। তখন এই কাছিমগুলো ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে শনাক্তের পর কতো ডিম পাড়ল বা গেলবছর কতোটি ডিম পেড়েছিল এই তথ্যগুলো খোঁজে পাওয়া যাবে। গবেষণার কাজই হচ্ছে কেন এর উত্তর খোঁজা। মূলত ট্যাগিংয়ের কাজ হচ্ছে গবেষণা।’
এ দিকে ট্যাগিংয়ের পর মা কাছিম দুটিকে ছেড়ে দেয়া হয় উপকূলের বালিয়াড়িতে। ধীরে ধীরে তারা ভেসে যায় সাগরের নোনাজলে। পুরো কার্যক্রমটি করেছে কোডেক নেচার এন্ড লাইফ প্রকল্প। মা কাছিম সংরক্ষণ, গবেষণা এবং প্রজনন বৃদ্ধিতে এ কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা।
কোডেক নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শীতল কুমার নাথ বলেন, ‘গেলো ৪ বছর ধরে সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণে কাজ করছে কোডেক। মূলত মা কাছিম বালিয়াড়িতে ডিম পাড়লে তা হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়। গত ৩ বছরে হ্যাচারি ৯ হাজার কাছিমের ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ বছর নতুন সংযোজন হচ্ছে, কাছিমের ট্যাগিং কার্যক্রম। কাছিম আসলে তাদের ট্যাগিং করা হবে এবং ধারাবাহিকভাবে উপকূলে ডিম পাড়তে আসছে কিনা সেটা দেখা হবে। কাছিম ডিম পাড়তে আসলেও বুঝা যাবে আর না আসলেও সেটি জানা যাবে। গবেষণার কাজে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী। কাছিমকে রক্ষায় ট্যাগিংয়ের পাশাপাশি ট্রাঙ্কিংয়ের কাজ শুরু করবেন তারা।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর সামুদ্রিক মা কাছিম মৃত্যুর সংখ্যাটা অন্যান্য বছরের তুলনা অনেক বেশি। চলতি মৌসুমের ফেব্রুয়ারি মাসেই ৭০টির মতো মা কাছিম মৃত অবস্থায় উপকূলে ভেসে এসেছে এবং সবগুলোর পেটে ডিম ছিল। এটা কিন্তু অনেকটা উদ্বেগের বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই উদ্বেগ থেকেই কিন্তু কাছিম রক্ষায় কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সমুদ্রগবেষণা ইনস্টিটিউট। এখন বেসরকারি সংস্থা কাছিমের ট্যাগিং করল, যা গবেষণা কাজে আসবে। আগামী বছর থেকে মা কাছিমের ট্রাঙ্কিং কার্যক্রম করবে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট। ট্রাঙ্কিং করলেই বোঝা যাবে, কাছিম কোন পথ দিয়ে সাগরে যাচ্ছে, কোন জায়গায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তখন মা কাছিম রক্ষায় আরও বেশি কাজ করা যাবে।’
গেলো ৩ মাসে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ডিম পাড়তে আসে ১৬৩টি মা কাছিম। যার মধ্যে মারা গেছে ৯৯টি। আর এসব কাছিম ডিম পেড়েছে প্রায় ১৯ হাজারের মতো।