নির্বাচন ঠেকানোর কৌশল ঠিক করছে বিএনপি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৩; সময়: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ |
নির্বাচন ঠেকানোর কৌশল ঠিক করছে বিএনপি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত দলের ভাঙন নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিান্তায় ছিল বিএনপি। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সফল হয়নি এমন বিবেচনায় দলটি যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। এখন শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর টার্গেট করেছে মাঠের এই বিরোধী দল। সেজন্য নানা কৌশলও করা হচ্ছে।

গত ৩০ নভেম্বর ছিল আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে এবার আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি দল অংশ নিলেও বিএনপিসহ ১৪টি দল ভোটের বাইরে রয়েছে। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ভোটে অংশগ্রহণ করছে। শেষদিনে দল দুটির প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সবগুলোই অংশ নিয়েছিল। আর দশম সংসদ নির্বাচনে ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। সেসময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বয়কট করে তা প্রতিহতে আন্দোলনে নামে বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ১৮ দলীয় জোট। নির্বাচনের আগে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়, যা নির্বাচনের পরেও বেশি কিছুদিন অব্যাহত ছিল। তবে সেই আন্দোলনে কোনো সফলতা আসেনি।

১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো। ওই নির্বাচনে মোট ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। ভোট নেওয়া হয় ১৪৭টি আসনে। আওয়ামী লীগ মোট ২৩৪টি আসনে বিজয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। সংসদ নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের নেতা হন রওশন এরশাদ।

এবারও নির্বাচনী ট্রেন মিস করা প্রসঙ্গে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কুইন্স পার্টি-তৃণভোজী পার্টি-ডামি পার্টি-খুদকুঁড়ো পার্টি এবং বিভিন্ন দল থেকে অচ্ছুত লোকজন হায়ার করার মধ্য দিয়ে চলা নির্বাচনী ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে দেবে না মুক্তিকামী জনতা। সুমতি হলে ক্ষমতাসীনরা জনগণের দাবি মেনে নেবে। অন্যথায় এক্সিডেন্ট অথবা পতন অনিবার্য।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ভাঙার যে তৎপরতা ছিল তাতে কোনো মহলই সফল হয়নি বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের মূল্যায়ন হচ্ছে, নানা চাপ ও প্রলোভন থাকার পরও দল ভাঙার ‘প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে সরকারের পরিকল্পনাও হোঁচট খেয়েছে। এটিই বিএনপির বড় সাফল্য।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জানান, দল ভাঙার তৎপরতায় যাতে কাউকে ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য এতদিন গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আত্মগোপনে ছিলেন। এখন দলের নেতারা কৌশল বদলাতে পারেন। আজকালের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে বাকি নেতারা আত্মগোপনে থেকে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিকল্প এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসতে চান। এর অংশ হিসেবে নীতিনির্ধারণী ফোরামের দুই নেতা প্রকাশ্যে এসেছেন।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর বিকল্প ভাবছে না বিএনপি। এজন্য এক দফার আন্দোলন আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শরিকদের সঙ্গে এখন থেকে ঘনঘন বৈঠক হবে। এছাড়া যুগপতের বাইরে থাকা যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি তাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে- যাতে বিএনপির ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে তারাও যোগ দেয়।

বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ায় এখন আন্দোলনকে দুই পর্বে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রথম পর্ব হচ্ছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় পর্ব হলো ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের এই কর্মসূচির ব্যাপারে ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল রোববার সকাল থেকে নবম ধাপে দেশব্যাপী ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হবে যা আগামী মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হবে। তবে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির প্রভাব ক্রমেই কমে আসায় আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে বিকল্প একাধিক কর্মসূচি বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ভাবনায় রয়েছে।

এর অংশ হিসেবে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের (বিএসপি) উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার বিচার, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা, দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, কর্মচ্যুতদের কাজে পুনর্বহাল ও ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবিতে এই শ্রমিক সমাবেশ হয়। এর আগে বিএনপির কারাবন্দি, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের নিয়ে তাদের ব্যানারে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারাবন্দি স্বজনদের এই ধরনের কর্মসূচিকে বিভাগীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের।

এছাড়া যুগপতে থাকা দলগুলোর অঙ্গসংগঠনকে নিয়ে ঢাকায় নারী সমাবেশ, যুব সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশ, ছাত্র সমাবেশের কথাও ভাবছে বিএনপি। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত এসব কর্মসূচি করার কথা ভাবা হচ্ছে।

এদিকে তফসিল অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবে। তখন পরিস্থিতি বুঝে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচনের কয়েকদিন আগ থেকে ফের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে যেতে পারে দলটি। নির্বাচনের দিন সারা দেশে হরতালের ডাক দেওয়া হতে পারে। তবে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচনের পরও কিছুদিন হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি অব্যাহত থাকতে পারে। নির্বাচন ঠেকানোর কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপি ও শরিকদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ভোটারদের ভোট বর্জনের আহবান জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, ভোট বর্জনের এই আহবান অব্যাহত রাখা হবে। বিএনপি ও শরিকদের লক্ষ্য, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ন্যূনতম করা। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ভোটাররা একতরফা নির্বাচন বর্জন করলে ভোট ঘিরে উৎসব-আমেজও কমে যাবে। এমন অবস্থায় ভোটারদের অনুপস্থিতিতে ভোট হলে সেই নির্বাচন বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে