রাবির ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরে পাওনাদারের হিড়িক

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৩; সময়: ১১:৩৭ অপরাহ্ণ |
রাবির ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরে পাওনাদারের হিড়িক

ইবতেসাম শান্ত, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরে পাওনাদারদের হিড়িক পড়েছে। তৎকালিন ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নুরের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক টাকা বকেয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন সেই বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়তই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট ধরণা দিচ্ছেন পাওনাদাররা। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই অবিলম্বে এ ছাত্র উপদেষ্টাকে পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ জানান, বকেয়া টাকার জন্য প্রতিনিয়ত পাওনাদাররা আসছেন। টাকা চেয়ে আবেদন করেছেন অনেকে। কিন্তু এই বিষয়ে তো আমার জানি না। কেননা এসব অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য আগেই বরাদ্দ দেয়া হয়। ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের তত্বাবধানে সেই বরাদ্দ দিয়ে অনুষ্ঠান পালিত হয়। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠানে বকেয়া পড়ার কথা নয়। তাই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অবিহিত করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান এম তারেক নুর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই এবছর ১৪ এপ্রিল অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদকে তার স্থলাভিষিক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রকল্যাণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় নানা দিবস ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের তত্বাবধানে পালিত হয়।

এসব অনুষ্ঠানের বরাদ্দ বাবদ অর্থ এ দপ্তরের কর্মকর্তাকে অগ্রিম বরাদ্দ প্রদান করা হয়। দায়িত্বে থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় দিবসসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, আলোকসজ্জা ও খাবারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করেন তারেক নুর। কিন্তু বরাদ্দকৃত টাকা তোলা হলেও পাওনাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করেন নি তিনি। ফলে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে প্রায় লক্ষাধিক টাকা বকেয়া পড়েছে। এখন এই টাকার জন্য প্রতিনিয়ত প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছেন পাওনাদাররা।

পাওনাদার মঞ্জুরুল জানান, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে ক্যাম্পাসজুড়ে আলোকসজ্জা বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা চুক্তি হয়। প্রথমে ১ লক্ষ টাকা দিলে আলোকসজ্জার কাজ শুরু হয়। কথা ছিল অনুষ্ঠান শেষে বাকি টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু তিনি পরিশোধ করেছেন মাত্র ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বাকি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রায় ২ বছর ধরে ঝুলে আছে। অথচ ঋণ করে আমি এই কাজ করেছি। সেই টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে এখন আমার ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

এব্যাপরে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এম তারেক নুরের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, গত মে মাসে রেজিস্ট্রার দপ্তরের পাঠানো এক চিঠিতে এম তারেক নুরকে দ্রুত পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়। সেটার একটি কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ছাত্র উপদেষ্টা থাকাবস্থায় বিভিন্ন কাজে ৬৭ দফায় অগ্রিম ১৯ লক্ষ ৯৮ হাজার ১৫০ টাকা গ্রহণ করেছে এম তারেক নুর। কিন্তু মাত্র ৬ লক্ষ ১৬ হাজার ১৮৫ টাকার সমন্বয় করেছেন।

বাকি ১৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৯৭০ টাকা সমন্বয় করেন নি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই টাকার সমন্বয় করা কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া দায়িত্বকালে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করেও পাওনা পরিশোধ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই অবিলম্বে এসব প্রতিষ্ঠানকে পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত হয়ে এ টাকার সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে