হারিয়ে গেছে পৌষ সংক্রান্তি
আফসানা সেতু : গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হচ্ছে পিঠা। পৌষ আসলেই পিঠার কথা মনে পড়ে যায় সকলের। পৌষ সংক্রান্তিতে যেন পিঠার মৌ মৌগন্ধে মানুষের মন ভরে ওঠে। পৌষ সংক্রান্তির আরেক নাম মকর সংক্রান্তি। পৌষের শেষে এই উৎসব পালন করা হয়। দুই তিন দিন ধরে চলো এই পিঠা উৎসব। ভাপা, দুধ পুলি, চিতই ,মালপোয়া, পাটিসাপটা ,গড়গড়ি, নকশি পিঠা ইত্যাদি।
এছাড়াও রয়েছে ঝাল পিঠা ,ডিম পিঠা, নুডুলস পিঠা ,সবজি পিঠা , কলা পিঠা ,শামুক পিঠা ,গজা পিঠা, ম্যারা পিঠা, সেমাই পিঠা, আঙ্গুরি পিঠা, লবঙ্গ পিঠা ,তেজপাতা পিঠা, বিস্কুট পিঠা, মালাই পিঠা ,তাল পিঠা ইত্যাদি।
বাংলাদেশে যে কত রকমের পিঠা রয়েছে তা হিসাব করে পাওয়া যাবে না।
শীত আসলেই বাড়িতে যেন ঘটা করে পিঠার আয়োজন করা হতো। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকালবেলা থরথর করে শীতে কাঁপত আর ধোঁয়া ওঠা পিঠা খেতো।
তবে কালের বিবর্তনে এই অনুষ্ঠানগুলো এখন প্রায় বিলীন। সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
শীতের পিঠা তৈরি করেতে খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। জ্বালানি হিসেবে লাগে খড়ি। উপকরণ হিসেবে লাগে চালের গুঁড়া, চিনি, গুড় , নারকেল ইত্যাদি।
তবে এখন পিঠার দোকান দেখা যায় প্রচুর পরিমাণে। দোকান গুলোতে দেখা যায় ভাপা পিঠা, তেল পিঠা, চিতই পিঠা ইত্যাদি।
চিতই পিঠার সাথে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ভর্তা। যেমন : মরিচ ভর্তা, শুটকি মাছ ভর্তা, ধনিয়া পাতা ভর্তা, সরিষা ভর্তা। এগুলো দিয়ে খেতে খুবই মজা লাগে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, টিএসসি চত্ত্বরে ভাপা পিঠার দোকান দিয়ে বসে বেশ কিছু নারী ব্যবসায়ী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পাশে পিঠার দোকান দিতে দেখা যায় শীতের আগমনী বার্তা আসার সাথে সাথেই।
এছাড়াও রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, আলুপট্টি, অলকার মোড়, রানীবাজার, নিউ মার্কেক, সিএনবি মোড়, লক্ষিপুর, উপশহরসহ বিভিন্ন জায়গায় পিঠার দোকান দেখা গেছে। এসব দোকান গুলোতে বিকেল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বিভিন্ন পেশাজীবি, স্কুল-কলেজে ও বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরা পিঠা খাওয়ার জন্য ভীড় জমায়।
মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যায় গরম গরম পিঠা। উনুন এর পাশে বসে এই পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।
পিঠা বানানো এ বিক্রির সাথে জড়িত মহিলা কর্মীরা। ভাপা পিঠা বিক্রেতা সখিনা বলেন, শীতের শুরু থেকেই শুরু হয় তার ব্যবসা , শীত যত বাড়ে বিক্রি ও বেশি হতে থাকে।
শিক্ষার্থী রেহানা বলেন, আমরা সকালে রাস্তার ধারের পিঠা খেয়ে সকালের নাস্তা সেরে ফেলি। পড়াশুনা ও বাসস্থান দূরে হওয়ায় নানুর হাতের বানানো পিঠা কবে খেয়েছি মনে পড়ে না। পৌষ সংক্রান্তি থেকে শুরু হতো নানুর পিঠা বানানো। নারকেল কুঁড়িয়ে রাখতেন ,আমরা ভাই বোনরা মিলে সেই নারকেল চুরি করে খেতাম। দুধপুলি ছিলো আমার সব থেকে পছন্দের পিঠা।
রহিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে পিঠা খেতে খুবই ভালো লাগে। দামেও বেশ সস্তা।
এই পিঠা খাওয়ার সাথে সাথে আমারা গ্রামীণ অতীতে ফিরে যাই।
অর্থনীতির সুবাদে পিঠাও উঠে এসেছে দোকানে। হারিয়ে গিয়েছে সেই পৌষ সংক্রান্তি।